শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
কৃষি

মাছ চাষে কর্মসংস্থান

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

মাছ চাষে কর্মসংস্থান

রাজশাহীতে কয়েক বছর থেকে মাছ চাষে বিপ্লব চলছে। আর নতুন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাজা মাছ সরবরাহে প্রথম স্থানেও এখন রাজশাহী বিভাগ। প্রতিদিন রাজশাহী জেলা থেকে ১৪০ থেকে ১৫০ ট্রাকে করে দুই কোটি টাকার তাজা মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন ফরমালিনমুক্ত মাছ পাচ্ছেন। রাজশাহীতেও নতুন করে তৈরি হচ্ছে বেকারদের কর্মসংস্থান। রাজশাহী বিভাগীয় মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, তাজা মাছ বাইরে পাঠানোর উদ্যোগটি প্রথমে রাজশাহী জেলা থেকে শুরু হয়। জেলার পুঠিয়া, পবা, মোহনপুর, দুর্গাপুর, বাগমারা, তানোর এবং নাটোর জেলার সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম থেকে সবচেয়ে বেশি মাছ ঢাকায় যাচ্ছে। রাজশাহী জেলা থেকে প্রতিদিন ১৫০ ট্রাকে মাছ যাচ্ছে। আর একটি ট্রাকে মাছ থাকে ৭০০ থেকে ৯০০ কেজি। বর্তমানে জেলার ১২ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এই মাছচাষকে ঘিরে। প্রায় দুই লাখ ৮৮ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান এখন মাছ চাষে। আর বছরে আয় হচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। জেলায় বর্তমানে ১৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমির কয়েক হাজার পুকুরে প্রতিবছর ৮৪ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। তথ্য মতে, গত ৫ বছরে জেলায় নতুন করে আরও কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। যা মৎস্য অফিসের অন্তর্ভুক্ত নয়। রাজধানীতে উত্তরাঞ্চলের তাজা মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখানে প্রতিনিয়ত নতুন পুকুরের পাশাপাশি বাড়ছে চাষিদের সংখ্যা। তথ্য মতে, এই জেলায় সব মিলে প্রতিবছর ৮৪ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা। আর মৎস্যজীবীদের মাঝে নতুন করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার বেকার যুবকের। জেলার উপজেলাগুলোর কয়েকজন মাছচাষি ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, রাজধানীসহ সারা দেশে রাজশাহী অঞ্চলের উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর মাছে ফরমালিন আতঙ্কের কারণে ক্রেতারা গত কয়েক বছর থেকে বড় আকারের তাজা মাছ কিনতে বেশি আগ্রহী হয়েছেন। তাদের চাহিদা মোতাবেক প্রতিদিন শত শত ট্রাকে বিশেষ ব্যবস্থায় তাজা মাছ সরবরাহ করছেন চাষিরা। বর্তমানে বড় ও তাজা মাছগুলো প্রকারভেদে প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে করোনাকালীন সময়ে বাজার একটু কমেছে। চাষী ও ব্যবসায়ীরা আরও জানান, তাজা মাছের জন্য প্রথমে পলিথিন বিছিয়ে সেখানে পানি দিয়ে তাজা মাছগুলো ছাড়া হয়। সারা রাস্তায় পলিথিনে অক্সিজেন বাড়াতে একজন পা দিয়ে পানি নাড়াতে থাকেন। আর ট্রাকের পানি পরিষ্কার রাখতে পথে একবার পানি পাল্টাতে হয়। এ জন্য সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুরের কয়েক জায়গায় রাস্তার পাশে পানির মেশিনের ব্যবস্থা করা আছে। মরা মাছের চেয়ে তাজা মাছের চাহিদা ও দাম বেশি থাকায় এখন শুধু মৎস্য ব্যবসাই নয়, অনেক পেশার মানুষ মাছ চাষ করছেন। পবা উপজেলার মৎস্য ব্যবসায়ী সাদিকুল ইসলাম জানান, ২০০৭ সালে সামান্য কয়েক কাঠা পুকুর দিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। ১৩ বছরে এখন প্রায় ১৮০ বিঘার পুকুর হয়েছে তার। তিনি বলেন, মাছচাষ লাভজনক ব্যবসা তবে তাজা মাছ আরও বেশি লাভজনক। মরা মাছ যেখানে ১০০ টাকা কেজি সেখানে তাজা মাছ ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়। তিনি জানান, করোনায় চাষি ও আড়তদাররা দাম পাচ্ছেন না। ঢাকায় পাইকাররা বাড়ি বাড়ি মাছ দিয়ে ডবল লাভ করছেন। পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের মাছচাষি এরশাদ আলী জানান, গত কয়েক বছর থেকে বাজার ভালো হওয়ায় বর্তমানে এই এলাকায় অনেকেই মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। অনেক কৃষক তাদের নিচু জমিগুলোতে এখন পুকুর খনন করছেন। আবার কেউ তাদের জমিগুলো পুকুর খনন করতে আগ্রহী হয়ে মৎস্য চাষিদের কাছে ইজারা দিচ্ছেন। রাজশাহী বিভাগে এখন ৮৪ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। চাহিদা আছে ৫২ হাজার মেট্রিক টনের। উদ্বৃত্ত থাকছে ৩২ হাজার মেট্রিক টন। রাজশাহী বিভাগীয় মৎস্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক অলোক কুমার জানান, মাছ চাষের জন্য রাজশাহী আগে থেকেই উপযুক্ত জায়গা। কয়েক বছরে জেলায় এই মাছ চাষে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বর্ষায় ধান খেতে মাছ চাষ, খাঁচায় মাছ চাষ অনেক লাভজনক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর