শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

সংক্রমণ বেশি এখন ঢাকার বাইরে

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ২৭৬৬ মৃত্যু ৩৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

এত দিন রাজধানী ঢাকাকে করোনা সংক্রমণের হটস্পট মনে করা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে সংক্রমণে ঢাকাকে ছাড়িয়েছে অনেক জেলা। গত কয়েক দিনের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকার বাইরে নমুনা পরীক্ষা বাড়ালেই বেড়ে যাচ্ছে রোগী শনাক্তের হার। আবার ঢাকার ভিতরে নমুনা পরীক্ষা বাড়ালেও শনাক্তের হার কমছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের গতকালের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৮৫৬টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ২ হাজার ৭৬৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এদিন ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরের জেলায় ৭৬টি নমুনা বেশি পরীক্ষা করা হয়। এর আগের পর পর তিন দিন ঢাকার বাইরের চেয়ে ঢাকার ভিতরে নমুনা পরীক্ষা বেশি হওয়ায় শনাক্তের হার ছিল যথাক্রমে ১৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ, ২০ দশমিক ৩০ শতাংশ ও ২০ দশমিক ২২ শতাংশ। এর মধ্যে ১৩ আগস্টের তথ্যানুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরের চেয়ে ঢাকার ভিতরে ৩ হাজার ২৬৪টি নমুনা বেশি পরীক্ষা করা হয়, যা ছিল সর্বোচ্চ ব্যবধান। আর ওই দিনই শনাক্তের হার সর্বনিম্ন (১৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ) পর্যায়ে নেমে আসে।

তবে আমাদের স্থানীয় সংবাদকর্মীদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী, ঢাকার বাইরের সব এলাকায় সংক্রমণ হার সমান নয়। কিছু জেলায় দীর্ঘদিন ধরেই শনাক্তের হার ৩০-৩৫ শতাংশের উপরে থাকছে যা সারা দেশের গড় সংক্রমণ হারের চেয়ে অনেক বেশি। গতকালও দিনাজপুরে শনাক্তের হার ছিল ৪৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। কুমিল্লায় শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গড় সংক্রমণ হার ২২ দশমিক ২১ শতাংশ যা সারা দেশের সংক্রমণ হারের চেয়ে বেশি। চাঁদপুরে গত মাসে টানা অনেক দিন শনাক্তের হার ৩৫-৪০ শতাংশের কাছাকাছি থাকলেও এখন কমে এসেছে। আবার কিছু জেলায় এখনো সংক্রমণ হার ২০ শতাংশের নিচে। এতে যেখানে সংক্রমণ হার বেশি সেখানে নমুনা পরীক্ষা বাড়ালেই বেড়ে যাচ্ছে শনাক্তের হার। তবে জেলাভিত্তিক তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে প্রকাশ না করায় বিষয়টি জানা যাচ্ছে না।

এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২ হাজার ৭৬৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭১ হাজার ৮৮১ জন। একই সময়ে আরও ৩৪ জনের মৃত্যু হওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৯১ জন। এক দিনে চিকিৎসাধীন আরও একহাজার ৭৫২ জন সুস্থ হওয়ায় মোট সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৬১ শতাংশ, মৃত্যু হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩৪ জনের ২৮ জন পুরুষ ও ছয় জন নারী। ৩৩ জন হাসপাতালে ও একজন বাড়িতে মারা গেছেন। এর মধ্যে ষাটোর্ধ্ব ২২ জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ছয়জন, চল্লিশোর্ধ্ব চারজন, ত্রিশোর্ধ্ব দুজন ছিলেন। ১৮ জন ঢাকা বিভাগের, দুজন চট্টগ্রাম বিভাগের, চারজন রাজশাহী বিভাগের, একজন খুলনা বিভাগের, একজন বরিশাল বিভাগের, চারজন সিলেট বিভাগের, দুজন রংপুর বিভাগের ও দুজন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা।

 

দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ আর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও তথ্য-

দিনাজপুর : গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫ জনের নমুনার ফলাফলে চিকিৎসকসহ ৬৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ নিয়ে জেলায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৩৫৯ জন। অপরদিকে সাজ্জাদ হোসেন (৪৪) নামে দিনাজপুর সদরের রুদ্রপুর এলাকার এক করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৪ জন। জেলায় এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬৩২ জন।

বগুড়া : জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনসহ এক দিনে আরও ৭২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৮৭ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৪৪৮ জন। মারা গেছেন ১২৪ জন।

কুমিল্লা : নতুন করে ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৪১ জনে। মোট সুস্থ হয়েছে ৪ হাজার ৬৭২ জন। মারা গেছে ১৫৪ জন। জেলায় এ পর্যন্ত করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে ২৭ হাজার ৬৫৩ জনের। এতে গড় সংক্রমণ হার দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ২১ শতাংশ।

গাজীপুর : এক দিনে আরও ৩০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় জেলায় মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৯১ জন। এ পর্যন্ত জেলায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৯৫৯ জন। মারা গেছেন ৫৮ জন।

বাগেরহাট : ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৩২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বাগেরহাট জেলায় করোনা শনাক্ত হলো ৭৭৪ জনের। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫৯৫ জন। মারা গেছেন ১৮ জন।

মেহেরপুর : মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকন, তার স্ত্রী মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী লায়লা আরজুমান বানু, বড় ছেলে সাইফ ও ছোট ছেলে সামিউজ্জামান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া সাহিদুজ্জামান খোকনের রাজনৈতিক সহকারী শামীম, জাহিদ এবং রাশেদেরও করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। অপরদিকে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার তুহিন রহমান ও হিসাবরক্ষক আজাদুর রহমান আজাদ এবং মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের এক কৃষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

চাঁদপুর : আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ায় মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৮৫ জন। মারা গেছেন ৭৫ জন।

সর্বশেষ খবর