মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

নিষেধাজ্ঞার কবলে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত

জনমানবহীন নির্জনতায় বিরাজ করছে সমুদ্রের গর্জন

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

নিষেধাজ্ঞার কবলে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত

করোনা সংক্রমণ রোধে কড়া নিষেধাজ্ঞার কবলে রয়েছে চট্টগ্রাম তথা দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। নান্দনিক এই সৈকত ২৫ মার্চ থেকে পুরোপুরি বন্ধ। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের নির্দেশনায় এখনো কোনো দেশি-বিদেশি পর্যটক পতেঙ্গা সৈকতে রাখতে পারছেন না তাদের পদচিহ্ন। তাই একসময়ের কোলাহলপূর্ণ এই সৈকতে বিরাজ করছে জনমানবহীন নিস্তব্ধতা। সকাল-সন্ধ্যা শতসহস্র ভ্রমণপিপাসু মানুষের পদভারে মুখরিত লুসাইকন্যা কর্ণফুলীর মোহনার এই সৈকতে প্রায় পাঁচ মাস ধরে নেমে এসেছে ভুতুড়ে পরিবেশ। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বজায় রাখতে স্থানীয় পতেঙ্গা থানা পুলিশও রয়েছে বদ্ধপরিকর। সৈকতের মূল ফটক দিয়ে পরিচিত-অপরিচিত কাউকেই প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছে না তারা। ফলে চলতি বছরের দুই ঈদের সময়েও পতেঙ্গা সৈকতে নামতে পারেননি কোনো বিনোদনপ্রেমী মানুষ। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে না আসা পর্যন্ত পতেঙ্গা সৈকত ভ্রমণপিপাসুদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানালেন পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জোবায়ের সৈয়দ। তবে এখনো মূল সৈকতের আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে কিছু মোটরবাইক আরোহী ও মোটরগাড়ি ব্যবহারকারী ছুটে যান বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে।

করোনাকালীন বদ্ধ এই সময়ে সৈকত এলাকায় বিচিত্র রং ছড়িয়ে সাজতে শুরু করেছে সদ্যনির্মিত রিংরোডের সড়কদ্বীপ এবং সংলগ্ন খোলা জায়গাগুলোতে লাগানো বাহারি ফুল ও লতাগুল্মের চারারা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় মাত্র কয়েক মাস আগে এখানকার দৃশ্যলোকে আনা হয়েছে বেশ পরিবর্তন। অত্যন্ত সাজানো-গোছানো পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে সৈকত এলাকায়। তবে করোনার কারণে বিনোদনপ্রিয় মানুষ সেই সব সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারছেন না। স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর ২৬ মার্চ থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত পুরোপুরি বন্ধ। এখানে মানুষের প্রবেশ ও জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দেয় পুলিশ। এর পর থেকে চট্টগ্রামের প্রধান পর্যটন এলাকা পতেঙ্গা হয়ে যায় জনমানবশূন্য এক বিরান সৈকত। জনমানবহীন নির্জনতায় বিরাজ করছে কেবল সমুদ্রের গর্জন। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলে পতেঙ্গা সৈকতের অবস্থান। সৈকতপ্রেমী অনেকে বঙ্গোপসাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসেন। এই সৈকত ঘিরে হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া সৈকত ঘেঁষে তৈরি হয়েছে সাড়ে ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ আউটার রিং রোড। প্রতিবছর ঈদ ও পূজায় পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় থাকত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। কিন্তু এ বছর আবাসিক হোটেল থেকে শুরু করে খাবারের হোটেল, ঝিনুকের দোকান, কাঁকড়া ফ্রাইয়ের দোকানসহ পর্যটনমুখী ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ব্যবসায়ীরা ঘরে বসে আছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও পতেঙ্গা সৈকত এলাকার দোকানদার আবদুল খালেক জানান, তিনি পৈতৃক সূত্রে ৪০ বছর ধরে এখানে দোকানদারি করে আসছেন। কিন্তু সমুদ্রসৈকত এলাকা এমন জনমানবহীন এর আগে কখনো দেখেননি। করোনা পরিস্থিতির পর নিষেধাজ্ঞা থাকায় কেউ এখানে আসেন না। সৈকতকেন্দ্রিক দোকানদার ও অন্য ব্যবসায়ীরা এখন আর্থিক সংকটে রয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে তাদের জন্য বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। পতেঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জোবায়ের সৈয়দ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে অধিকাংশ মানুষ আজ ভয়াবহ সংকট মোকাবিলায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় ২৮ মার্চ থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকা চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান স্যারের নির্দেশে পুরোপুরি লকডাউন করে দেওয়া হয়।

এত দিন কেউ আসতে চাইলেও পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করেছে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে। আমাদের পুলিশ টিম বিষয়টি নিয়ে সদা তৎপর রয়েছে।’ প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছে। এর ফলে চার স্তর থেকে উপভোগ করা যাচ্ছে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড থেকে সমুদ্রের দিকে নামতেই ৩০ ফুট প্রশস্তের হাঁটাপথ। এর পরই সুসজ্জিত বাগানের রংবেরঙের বর্ণিল ফুল। এখানে বসার জন্য দেওয়া হয়েছে হাজারো আসন। এ নান্দনিক উপভোগ্য ভ্রমণ স্পটে আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষের আগমন ঘটার কথা থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে আজ তার উল্টোটাই লক্ষ করা যাচ্ছে দেশের এই অন্যতম সমুদ্রসৈকতে।

সর্বশেষ খবর