বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

অনন্য প্রাচীন নিদর্শন সুরা মসজিদ

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

অনন্য প্রাচীন নিদর্শন সুরা মসজিদ

কথিত আছে এক রাতের মধ্যে ‘জ্বিনরা’ মসজিদটি নির্মাণ করে দিয়েছিল। তাই এটির নাম সুরা বা সুজা মসজিদ। এটি অনেকের কাছে গায়েবিভাবে নির্মিত মসজিদ বলেও পরিচিত।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং হিলি রেল স্টেশন থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার পূর্বদিকে চৌরগাছা গ্রামের ঘোড়াঘাট-হিলি রাস্তার পাশে মসজিদটির অবস্থান। কোনো দালিলিক তথ্য-প্রমাণ না থাকলেও কথিত আছে, মোঘল আমলে বাংলার নবাব সুজা এ মসজিদটি নির্মাণ করেন বলেই এর নাম হয়েছে শাহ সুজা মসজিদ। তবে শাহ সুজার ক্ষমতা গ্রহণের অনেক আগে এ মসজিদটি নির্মিত হয় বলে প্রবীণরা মনে করেন। প্রায় সোয়া ৫০০ বছর আগের নির্মিত এ মসজিদে রয়েছে টেরাকোটা অলংকরণ ও পোড়ামাটির চিত্রফলক। দেখা গেছে, মুসলিম আমলের পাকা ঘাটওয়ালা বিশাল দিঘির পাশে এ সুরম্য মসজিদ। বারান্দাসহ পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা এ মসজিদের মাপ প্রায় ৪২ বাই ২৬ ফুট। বারান্দার বাইরের মাপ প্রায় ১৪ বাই ২৬ ফুট। বারান্দার ভিতরের মাপ প্রায় ১৬ বাই ৮ ফুট। চার ফুট উঁচু মজবুত প্লাটফর্মের ওপর মসজিদের কাঠামো গড়ে উঠেছে।  প্রধান কক্ষের সঙ্গে যুক্ত আছে ৬ ফুট প্রশস্ত রাস্তা। বারান্দার পরেই মসজিদের প্রধান কামরা এবং সেই কামরার ভিতরের আয়তন প্রায় ১৬ বাই ১৬ ফুট। পূর্ব-পশ্চিম ও মাঝের দেওয়াল প্রায় ৮ ফুট করে পুরু। উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালে রয়েছে তিনটি করে দরজা। মাঝের দরজা দুটি পাশের দরজাগুলোর চেয়ে আকারে বড়। বারান্দাসহ উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালে দুটি করে দরজা। ভিতরে পশ্চিম দেওয়ালে রয়েছে তিনটি মিহরাব। মাঝের মিহরাবটি আকারে বড়। মসজিদে চারটি মিনার বা স্তম্ভ ছিল। এগুলো পাথরের তৈরি এবং পাথর কেটে মাপমতো এগুলো তৈরি করা। মিনারগুলো দেওয়ালের ইটের সঙ্গে শক্তভাবে গেঁথে দেওয়া হয়েছিল। মসজিদের কার্নিশগুলো বাঁকানো। ৩১ একর ২১ শতক জায়গার ওপর দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি। শুধু মসজিদটি রয়েছে ১৯ শতকের ওপর।

প্রধান কামরার উপরে রয়েছে একটিমাত্র গম্বুজ। এর চারপাশের দেওয়ালের উপরে তৈরি এবং বেশ উঁচু। গম্বুজটি দেখতে বেশ মনোরম। বারান্দার উপরে রয়েছে তিনটি ছোট গম্বুজ। মসজিদের বাইরে কোনো প্লাস্টার নেই। পরিবর্তে রয়েছে অতি সুন্দর পোড়ামাটির চিত্রফলকের কাজ। নানারকম লতাপাতা, ফুল, ঝুলন্ত শিকল ইত্যাদির কাজগুলো অতি উন্নতমানের। মসজিদের ভিতরে মিহরাবগুলোতেও একই ধরনের পোড়ামাটির চিত্রফলক রয়েছে। বাইরের দিকে দেয়ালের গায়ে ছোট ছোট খোপকাটা টেরাকোটা অলংকরণ ইমারতের বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। লতা জাতীয় ভিন্ন নকশায় বাইরের দেয়াল সুসজ্জিত করা, যা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এটি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ সেকেন্দার আলী বলেন, এ মসজিদ নির্মাণের পেছনে অনেক ইতিহাস আছে। মসজিদের কিছু কিছু সংস্কার কাজ এখনো বাকি আছে। উপজেলা প্রশাসন এরই মধ্যে কিছু সংস্কার কাজ শেষ করেছে। বাকি কাজগুলো শেষ করে মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে পারলে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। মসজিদের পেশ ইমাম মিজানুর রহমান জানান, মসজিদে এখনো নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী মসজিদটি দেখার জন্য আসেন। অনেকে নিজেদের বিভিন্ন মানত পূরণ করার জন্য এখানে এসে রান্না করে আশপাশের লোকজনকে খাওয়ান। বিশেষ দিবসে শত শত মানুষের ভিড় জমে এখানে। তার ধারণা, মসজিটিকে সংস্কার এবং এর নির্মাণ শৈলী পুনর্নির্মাণ করা হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটবে।

সর্বশেষ খবর