বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ব্রিটেনে শখের আঙিনায় লাউ চাষ

আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য

ব্রিটেনে শখের আঙিনায় লাউ চাষ

‘বিদেশ ওইল সাত সমুদ্র তেরো নদী পার। আয় আত্মীয় ফালাইয়া আইছি, দেশ ছাইড়া দূর দ্যাশে থাকলেও দ্যাশের টান অন্তরে সব সময় থাকে। দ্যাশের খাওনের যে স্বাদ তা কোনো কিছুর লাগে তুলনা ওয় না। এর লাগিয়া আর নিজের শখের বশেই ২০০১ সালে বাসার আঙিনায় দেশি গাছ লাগানো শুরু করি।’

এভাবেই নিজের শখের বাগান শুরুর গল্প বললেন লন্ডনে বাঙালি বাগানপ্রেমীদের পরিচিত মুখ আজম খান। ইস্ট লন্ডনের ব্যাকটন এলাকায় বাড়ির পেছনে সবুজের এক মহাসমারোহ গড়ে তুলেছেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের আজম খান ও তার স্ত্রী। যে কোনো বাঙালি বাগানের আঙিনায় গেলে প্রেমে পড়া ছাড়া উপায় নেই। করোনার এ মহাকালে এক টুকরো প্রশান্তির ছায়া ঘিরে রেখেছে আজম খানের শখের বাগান। আর এ শখের বাগান দেখতে লন্ডনের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক বাঙালি ভিড় করেন তার বাড়িতে। অনেক সময় অনেকে বাগান করার বিষয়ে তথ্যও জানতে চান আজম খানের কাছে। বাগান বিষয়ে মানুষের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে বা মানুষের এ আগ্রহ অনেক বেশি উপভোগ করেন বলে আজম খান আমাদের জানান। তিনি বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে বাড়ির পেছনে অল্প অল্প করে বাগান তৈরি করি। অনেকটা শখের বশে আবার কিছুটা দেশীয় খাবারের স্বাদ নিতেই এ পরিকল্পনা। প্রথম বছরই যখন গাছে লাউ আর শিম ধরে তখন এ শখ কয়েক গুণ বেড়ে যায় আমার।’

আজম খানের শখের বাগানের সহযোগী তার স্ত্রী। বাগান সম্পর্কে বলেন, ‘প্রতি বছর গ্রীষ্মেই দুজনে মিলে বাগানের আয়োজন করি। সকাল-বিকাল পানি দিই। যত্ন করি। তারপর যখন সবজি ফলন হয়, তখন সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। নিজেরা খেয়ে আত্মীয়-বন্ধুর বাসায়ও এ সবজি পাঠাই। তাদের মুখেও যখন হাসি দেখি, তার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।’ আজম খানের বাগানের সব থেকে বেশি জনপ্রিয় বাঁশলাউ। এ বছর একটি বাঁশলাউ হয়েছে যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ ফুট। আর দুটি পানিলাউ হয়েছে যার একেকটির ওজন ১০ কেজির মতো। বাগানে সবজির তালিকায় আরও আছে শিম, করলা, বেগুন, টমেটো, কচু, পাতাকপি, ডাঁটা, ক্যাপসিকাম, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি। এসব সবজি সম্পূর্ণ বাংলাদেশি জাতের। শুধু সবজিই নয়, পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের ফল-মূলের চাষও করেছেন তিনি।

করোনার এই সময় কীভাবে বীজ সংগ্রহ ও চাষ করলেন- জানতে চাইলে আজম খান বলেন, ‘বর্তমান সময়টা আমাদের জন্য মহাবিপদের। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে দেশ থেকে বীজ আনি। তবে এবার করোনার কারণে আনতে পারিনি। গত বছর আমি কিছু বীজ সংগ্রহ করেছিলাম; যা দিয়ে এবার বাগান করি। চাইলে আমার মতো অন্যরাও এক বছরের ফসল কিছুটা সংগ্রহ করে ঘরে বসেই বীজ তৈরি করতে পারবেন।’ প্রবাসজীবনে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আজম খান, ব্রিটেনে এক নামে সবাই চেনে ‘শেফ আজম খান’ নামে। বর্তমানে অবসর যাপন করলেও চেষ্টা করছেন মাদার কারি নামে একটি কারি পেস্ট বাজারজাত করার। রান্নায় যেমন দক্ষ তেমন বাগানেও দক্ষতার পরিচয় রাখা আজম খান আমাদের সঙ্গে তার বাগানের কিছু টিপস শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাজারে তো অনেক ধরনের সার পাওয়া যায়। সেগুলোর সঙ্গে প্রবাসেও আপনি বাগানের জন্য সার তৈরি করতে পারবেন।’ তিনি জানান, পাকা কলার বাকল না ফেলে দিয়ে তা পানির মধ্যে তিন-চার দিন ভিজিয়ে রাখলে গাছের পটাসিয়াম হিসেবে কাজ করে; যা গাছের ফলন বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে ব্যবহৃত চা পাতা ভিজিয়ে তার পানি গাছে দিলে তা নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের কাজ করে; যা গাছের বৃদ্ধি ও সতেজতার সাহায্য করে। আজম খান বলেন, ব্রিটেনে ছোট আঙিনায় বাগান করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আগ্রহ। তিনি আশা করেন, সবার বাসার পেছনেই গড়ে উঠুক ছোট করে হলেও একটি সবুজ জীবনের গল্প।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর