বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় থেমে গেছে আর্থিক খাত সংস্কার

আলোচনায় নেই ব্যাংকিং কমিশন, বাড়ছে অনিয়ম-দুর্নীতি

মানিক মুনতাসির

করোনায় থেমে গেছে আর্থিক খাত সংস্কার

অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডুবতে থাকা ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংস্কার প্রস্তাব বেশ জোরালো ছিল গত বছর। চলতি বছরের শুরুতে করোনাভাইরাসের আগমনে তা থেমে গেছে। এমনকি একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠনের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তা-ও থমকে আছে অনেক দিন। খেলাপি ঋণ আদায়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনের কাজে অনেকটাই অগ্রসর হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রায় চার মাস ধরে সে কার্যক্রমও বন্ধ। গত অর্থবছরের বাজেটে এ সংক্রান্ত কিছু ঘোষণাও ছিল। সেগুলোর বাস্তবায়নে সরকার অনেক পদক্ষেপও নিয়েছিল। কিন্তু চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে এসব বিষয় স্থান পায়নি। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতাতেও আর্থিক খাত সংস্কারের নতুন কোনো পদক্ষেপের ঘোষণা আসেনি। এতে করে আর্থিক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি আরও বাড়ছে। যা নিয়ে এক রকম হতাশাই ব্যক্ত করেছে বিশেষজ্ঞরা। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা মনে করেন করোনায় অচলাবস্থার কারণে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি আরও বেড়েছে। আর সুদ হার, ঋণখেলাপিদের সুবিধা দেওয়া না দেওয়া, ভালো গ্রহীতাদের সুবিধা প্রদান আবার স্থগিত-এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অসংখ্য সার্কুলার জারি করেছে গত কয়েক মাসে। এ নিয়েও গ্রাহকদের মাঝে রয়েছে নানা ধরনের অস্পষ্টতা। এতে ঋণগ্রহীতা ও গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত ক্ষোভও জানাচ্ছেন নানাভাবে। এ খাতে জবাবদিহিতার অভাবে যে যার মতো চলছে। ব্যাংকগুলোও তাদের খেলাপিঋণ আদায়ের গতিধারা ইচ্ছেমতো দেখাচ্ছে যা শুধু কাগজে কলমে। অথচ বাস্তব অর্থে খেলাপি ঋণ মোটেই কমেনি। ব্যাংকগুলোতে পরিচালকদের অযাচিত হস্তক্ষেপও কমেনি এতটুকু। অর্থবিভাগ সূত্র জানায়, করোনা আতঙ্কের মধ্যেই ব্যাংক ও আর্থিক খাতে যুক্ত হয়েছে নতুন আতঙ্ক। সেটা হলো কর্মীদের বেতন-ভাতা কর্তন এবং কর্মী ছাঁটাই। এটা সমগ্র আর্থিক খাতের অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিচালক মুনাফা বাড়ানোর এবং সামগ্রিক ব্যয় কমানোর যুক্তি দেখিয়ে ইতিমধ্যে একাধিক ব্যাংক তাদের কর্মীদের বেতন-ভাতা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এতে কর্মীদের মনে অসন্তোষ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ  নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমনিতেই মানুষ নানা সংকটে পড়েছে। জীবন-জীবিকার যুদ্ধে সবাই এখন আতঙ্কিত। সূত্র জানায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকিং কমিশনসহ আর্থিক খাত সংস্কারের জোরালো ঘোষণা ছিল। সেটার বাস্তবায়নে সরকার অ্যাসেট  ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনেরও প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। কিন্তু এবার করোনা মহামারীর অচলাবস্থার কারণে বাজেটে অনেক কিছুই উপেক্ষিত হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কার। এ বিষয়ে বাজেটে তেমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এমনকি আগামী এক বছর এ খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়নি। এতে অনেক বিশ্লেষকই বিস্মিত হয়েছেন। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ছাড়া শক্তিশালী ব্যাংক খাত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। অথচ এবারের বাজেটে এ বিষয়টি অনুপস্থিত। এতে দুর্নীতিবাজ ও ঋণ কেলেঙ্কারির হোতারা আরও উৎসাহিত হবে। ফলে বাজেট পাসের আগে এ বিষয়টিকে বাজেটের অন্তর্ভুক্ত করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আর্থিক খাত সংস্কারে গত ১০ বছরে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা শুধু ব্যাংকিং কমিশন করাসহ আরও অনেক পদক্ষেপের আলোচনাই শুনেছি। কিন্তু বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর ফলে খেলাপি, অনিয়ম-দুর্নীতি কোনোটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়নি বলে তিনি মনে করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর