মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

কী হবে বেসরকারি হাসপাতালের

বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ১২ হাজার ১২৭টি লাইসেন্স নবায়নের জন্য অনলাইনে আবেদন জমা । নবায়ন হয়েছে ৪ হাজার ৫১৯ । অপেক্ষমাণ ৭ হাজার ৬০৮

জয়শ্রী ভাদুড়ী

কী হবে বেসরকারি হাসপাতালের

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্সের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ১২ হাজার ১২৭টি বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নের জন্য অনলাইনে আবেদন জমা পড়েছে। নবায়ন হয়েছে ৪ হাজার ৫১৯টি লাইসেন্স। অপেক্ষমাণ আবেদনের সংখ্যা ৭ হাজার ৬০৮। এখনো আবেদন করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। টাস্কফোর্স ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ধরনের প্রতিষ্ঠান এখন থেকে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব ও উপসচিব (জনস্বাস্থ্য-১) ডা. শিব্বির আহমেদ ওসমানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘টাস্কফোর্স ঘোষিত সময়ের মধ্যে যারা আবেদন করেনি তারা অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হবে। তবে তাদের কী ধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা টাস্কফোর্সের আগামী সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। টাস্কফোর্স ঘোষিত সময়ের মধ্যে যারা আবেদন করেছে কিন্তু এখনো লাইসেন্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি তাদের কোনো সমস্যা হবে না।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সাল থেকে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বিভিন্ন সময়ে নিবন্ধন নিয়ে সারা দেশে সাড়ে ১৫ হাজারের কিছু বেশি প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক, ব্লাড ব্যাংক পরিচালনা করে আসছে। ৮ আগস্ট টাস্কফোর্সের ঘোষণার পর থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ১২ হাজার ১২৭টি আবেদন জমা পড়েছে। এখনো আবেদন করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৭৩টি। এ পর্যন্ত যেসব প্রতিষ্ঠান অবেদন করেছে তার মধ্যে ৩ হাজার ৩৯০টির কাগজপত্র যাচাইয়ের অপেক্ষায় আছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর কিছু কাগজ পত্রে সমস্যা থাকায় ৩ হাজার ৩০৪টি আবেদন অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। ২ হাজার ৬৭৫টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ৫৯৬টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে রিপোর্ট সম্পন্ন হয়েছে। সব নিয়মনীতি সম্পন্ন করে ৪ হাজার ৫১৯টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে। তবে ত্রুটিপূর্ণ বা অসম্পূর্ণ আবেদন, দেরিতে আবেদন ইত্যাদি কারণে নির্ধারিত সময়ে লাইসেন্স নবায়ন করতে না পারা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭ হাজার ৬০৮টি। বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকায় আবেদন করেছে ৩ হাজার ৪৮৫টি, চট্টগ্রামে ২ হাজার ৪৬৭টি, রাজশাহীতে ১ হাজার ৬৬৭টি, রংপুরে ৯৬৪টি, খুলনায় ১ হাজার ৫৯২টি, বরিশালে ৭৪০টি, সিলেটে ৫০৭টি ও ময়মনসিংহে ৭০৫টি। অপরদিকে লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে- ঢাকায় ১ হাজার ৭৫৪টি, চট্টগ্রামে ৭৬১টি, রাজশাহীতে ৮০৩টি, রংপুরে ১৪১টি, খুলনায় ৪৪৩টি, বরিশালে ৩১৭টি, সিলেটে ২১২টি এবং ময়মনসিংহে ৮৮টির। টাস্কফোর্সের লাইসেন্স নবায়ন সংক্রান্ত ঘোষণার পর বেসরকারি হাসপাতালগুলো লাইসেন্স নবায়নে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এর আগে বেশির ভাগ হাসপাতাল, ক্লিনিক লাইসেন্স নবায়নে অনাগ্রহী ছিল। লোকবল সংকটে ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৎপরতায়ও ঘাটতি ছিল। সারা দেশের ১৫ হাজারের বেশি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠান দেখাশোনার জন্য এ শাখায় পরিচালক থেকে শুরু করে মেডিকেল অফিসার মিলিয়ে কর্মকর্তা ১১ জন। যার মধ্যে একজন পরিচালক, দুজন উপপরিচালক, তিনজন সহকারী পরিচালক এবং পাঁচজন মেডিকেল অফিসার। অধিদফতরের হাসপাতাল শাখা সূত্রে জানা গেছে,  ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন ফি এবং নিবন্ধন নবায়ন ফি ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার ও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ৪ হাজার ২০০ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার লাইসেন্স নবায়নের আবেদন করলেও বাকি ১১ হাজারের বেশি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক নিবন্ধন ছাড়াই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। প্রতি বছর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স নবায়নের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিস্তারিত বিবরণ, সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র, কর সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য নথি প্রয়োজন পড়ে। নিবন্ধন নবায়ন করতে এসব হাসপাতালকে নিয়মিত নোটিস দেওয়ার পাশাপাশি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু বেশির ভাগ হাসপাতাল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপডেট না থাকায় তারা লাইসেন্স নবায়ন করতে চায় না। টাস্কফোর্সের ঘোষণার পর অধিক সংখ্যক হাসপাতাল লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছে। এ ব্যাপারে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রেকর্ডসংখ্যক হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নের আবেদনকে আমরা ভালো পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি। যারা আবেদন করেনি এখনো তাদের কোনো সমস্যা আছে কি না দেখতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিভাবক হিসেবে তাদের বিষয়টাও হয়তো দেখবে। কিছুটা সময় দিলে হয়তো তারাও আবেদন করবে। তবে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা তার সঙ্গেই আছি।

সর্বশেষ খবর