মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ধর্ষণ ও হত্যার অভিনব নাটক

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী দিশামণিকে (১৫) বেড়াতে নিয়ে গণধর্ষণের পর হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় প্রেমিকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। এরা কারাগারে রয়েছে। কিন্তু ঘটনার ৪৫ দিন পর বাবা-মার কাছে ফোন করে ৪ হাজার টাকা চায় দিশামণি। হতভম্ব বাবা-মা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানান। এমন সংবাদে পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। জেলাজুড়ে এ ঘটনার রহস্য জানতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সাংবাদিক ও প্রশাসনের হর্তাকর্তারা। অনেকে এ ঘটনাকে আলোচিত জজ মিয়া নাটকের দ্বিতীয় অধ্যায় বলে আখ্যা দেওয়া শুরু করেছেন। হত্যা ও ধর্ষণ শেষে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া দিশামণি থানায় হাজির হওয়ার পরই নড়েচড়ে বসে জেলা পুলিশ প্রশাসন। গতকাল দুপুরে স্কুলছাত্রী দিশামণিকে নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান ঘটাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সমন্বয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট সহায়ক তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। অন্যদিকে দিশামণির কথিত গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় আদালতে দেওয়া আসামিদের জবানবন্দি বিষয়ে আসামিদের স্বজনরা তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম আল মামুন ও থানার শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, নির্যাতন করে হত্যার হুমকি দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এসআই শামীম আসামিদের মিথ্যা হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করতে বাধ্য করেছেন। এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, দিশামণিকে ৪৫ দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে দিশামণি এত দিন যার সঙ্গে আত্মগোপনে ছিল সেই ইকবাল ওরফে ইব্রাহিমকে আটক করা হয়েছে। দিশামণি ও ইকবাল থানা হেফাজতে রয়েছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ আরও জানায়, দিশামণিকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার তিনজনকে আবার রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কেন তারা হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। তবে দিশামণির ফিরে আসা অবাক হওয়ার বিষয় ও চাঞ্চল্যকর।

পুলিশ সুপার যা বললেন, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন : এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, পুরো ঘটনার জটিলতা ও রহস্য ভেদ করতে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) ও জেলা ডিআই-১-কে নিয়ে সহায়ক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, স্কুলছাত্রীর ঘটনায় সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্ত এবং পুরো প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হয়েছে, কীভাবে ঘটনাটি ঘটেছে, কীভাবে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে- এসব বিষয়ে তদন্ত করে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্ত করে আমরা তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে এর প্রকৃত সত্য বের করে আনব ইনশা আল্লাহ। এখানে যে কোনো ধরনের গাফিলতি বা অন্যায়কারী ছাড় পাবে না। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত সম্পন্ন করা হবে।

হাই কোর্টে রিট : অন্যদিকে ‘ধর্ষণের পর নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া স্কুলছাত্রীর ৪৫ দিন পর থানায় জীবিত হাজির’ শীর্ষক গণমাধ্যমের সংবাদগুলো গতকাল হাই কোর্টের নজরে এনেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সকালে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। গণমাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি বলেন, সব বিষয় শুনে হাই কোর্ট তাকে একটি আবেদন জমা দিতে বলেছে। আদালত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে যথাযথ আদেশ দেবে। প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকার গার্মেন্ট শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলমের ছোট মেয়ে দিশামণি। সে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। গত ৪ জুলাই থেকে সে নিখোঁজ থাকে আর ৬ আগস্ট জাহাঙ্গীর আলম নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। উল্লেখ্য, ইকবাল ওরফে ইব্রাহিম নামে এক যুবককে পালিয়ে বিয়ে করে দেড় মাস ধরে বন্দরের কুশিয়ারায় বাস করছিল দিশামণি। তবে পুলিশের তদন্তে ধর্ষণ ও হত্যা শেষে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া স্কুলছাত্রী দিশা থানায় হাজির হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে জেলা পুলিশ প্রশাসন।

সর্বশেষ খবর