বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ভাটা করোনা প্রতিরোধ কাজে

১২টি কভিড হাসপাতালকে ননকভিড করা হচ্ছে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ভাটা করোনা প্রতিরোধ কাজে

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার যেসব সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নিয়েছিল সেগুলোর অনেক প্রকল্প থেকে সরে আসছে সরকার। সংক্রমণ হার একই রকম থাকলেও ১২টি কভিড হাসপাতালকে নন-কোভিড করা হচ্ছে। নতুন হাসপাতাল, মেডিকেল সেন্টার, হ্যান্ডওয়াশ কর্নার নির্মাণ কার্যক্রম পরিকল্পনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম থেকে সরে গিয়ে এখন ব্যস্ততা সবই ভ্যাকসিন ঘিরে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা সূত্রে জানা যায়, করোনার রোগী অনুপাতে শয্যা খালি থাকার ওপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে। সে তালিকা অনুযায়ী আপাতত ১২টি কভিড হাসপাতালকে নন-কভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকার নয়টি, সিলেটের একটি ও চট্টগ্রামের দুটি হাসপাতাল রয়েছে। বন্ধের সুপারিশ করা হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে, ঢাকার লালকুঠি মা ও শিশু হাসপাতাল, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, দুটি বেসরকারি কভিড হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রামের হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালসহ দুটি হাসপাতাল। এসব হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের তাদের পুরনো কর্মস্থলে ও যেসব হাসপাতালে জনবল সংকট, সেখানে পাঠানো হবে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ১২টি হাসপাতালের তালিকা করেছি। কিছুক্ষণ আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রস্তাবিত তালিকায় স্বাক্ষর করেছেন। আগামীকাল (আজ) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাব।’ সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনে করছে, করোনা মোকাবিলায় এখন আর সব প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রয়োজন নেই। কারণ হাসপাতালে ৭০ ভাগ করোনা শয্যা শূন্য থাকছে। এর পরিবর্তে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের টিকা কেনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ জন্য করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহযোগিতায় নেওয়া প্রকল্প দুটির কার্যক্রমেও আসছে পরিবর্তন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক ও এডিবির অর্থায়নে চলমান দুটি প্রকল্পের পর্যালোচনাকালে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দুই প্রকল্পের আওতায় নেওয়া উদ্যোগগুলো পর্যালোচনা করে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন, স্থলবন্দরে মেডিকেল সেন্টার স্থাপন, পিসিআর মেশিন কেনার সংখ্যা কমানো ও মহাখালীতে ফ্রন্টলাইনারদের জন্য হাসপাতাল না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রকল্প দুটিতে সারাদেশে আইসোলেশন সেন্টারের জন্য দুই হাজার ৬৭০টি শয্যা এবং ১৮৯টি পিসিআর মেশিন কেনার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এতগুলো শয্যা ও পিসিআর মেশিনের যৌক্তিকতা এখন আর নেই। পরে প্রকল্পের ডিপিপি থেকে ৩০০টি আইসোলেশন বেড ও ৮৯টি পিসিআর মেশিন না কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় এক হাজার ১২৭ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মার্কেট ভবনে চিকিৎসকসহ ফ্রন্টলাইনার ওয়ার্কারদের জন্য ২৫০ বেডের আলাদা কভিড হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্তও বাতিল করা হয়েছে ওই সভায়। সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছেন, ‘মহাখালী মার্কেট ভবনে আলাদা কভিড হাসপাতাল চালু করার কোনো প্রয়োজনীয়তা বর্তমানে আর নেই।’ পিসিআর মেশিন স্থাপন সম্পর্কে বৈঠকে স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান বলেছেন, ‘দেশে ৭৪টি পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। ৪২টি জেলায় কোনো পিসিআর মেশিন নেই। ছোট জেলাগুলোতে একটি করে পিসিআর মেশিনই যথেষ্ট।’ এডিবির প্রকল্পে দেশের ২৬টি স্থলবন্দরে মেডিকেল সেন্টার স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু এগুলো বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সব হাসপাতালে হ্যান্ডওয়াশ কর্নার স্থাপনের মতো বেশকিছু কাজ সরকার আর করবে না। এই দুই প্রকল্প পরিবর্তন এনে এখান থেকে ৯ কোটি ডলারের ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এ ব্যাপারে করোনা প্রতিরোধে সরকার গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভ্যাকসিন আমাদের অবশ্যই প্রয়োজন। এটা করোনা মুক্তিতে সহযোগিতা করবে। ভ্যাকসিনের আশায় প্রতিরোধ কার্যক্রমে ঢিল দেওয়া কখনোই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। করোনা সংক্রমণ রুখতে টেস্ট, আইসোলেশন ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ সংক্রমণ হারও মৃত্যু হার কিন্তু কমেনি।

সর্বশেষ খবর