বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডে হচ্ছে কী

সাকা চৌধুরীর ভাইয়ের হাতে নদী খননের দুই প্রকল্প

রুহুল আমিন রাসেল

যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ছোট ভাই জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরীর হাতে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারে থাকা নদী খনন কাজের দুই প্রকল্প তুলে দিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী অখিল কুমার বিশ্বাস। তিনি সাকা চৌধুরীর ভাইয়ের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ড্রেজার লিমিটেডকে রাঙ্গুনিয়া নদী খনন প্রকল্পের দুই ভাগে বিভক্ত ৪৬ কোটি টাকার কাজ প্রদানের আড়ালে অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে কালো তালিকাভুক্ত এক কোম্পানিকেও অবৈধ লেনদেনের আড়ালে নদী খননের কাজ দিতে তৎপর রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও রাঙ্গুনিয়া নদী খনন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, এই প্রকল্পের দুই নদী খননের কাজ এশিয়ান ড্রেজার লিমিটেডকে দেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে সম্প্রতি লেটার অব অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। ৪৬ কোটি টাকার খনন কাজের একটি ২৪ কোটি টাকার। আরেকটি ২২ কোটি টাকার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার মতিঝিলের শরিফ ম্যানশনের ঠিকানাধীন এশিয়ান ড্রেজার লিমিটেডের চেয়ারম্যান হলেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া কুখ্যাত রাজাকার ও বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরীর ছোট ভাই জামাল উদ্দিন কাদের চৌধুরী। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে শামিম রেজার নাম থাকলেও, পরিচালক হিসেবে রয়েছেন জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী শামা কাদের চৌধুরী ও পুত্র খতিব কাদের চৌধুরী। এ ছাড়াও পরিচালক হিসেবে আরও আছেন সৈয়দ আবরার হোসেন। এদিকে একাধিক সূত্র জানায়, অনৈতিকভাবে ঘুষ লেনদেন, অনিয়ম আর দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে পড়ছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী অখিল কুমার বিশ্বাস। অতীতে বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্বপালনকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পগুলোতে তার ব্যাপক অনিয়মের তথ্য মিলেছে। সরকারি টাকা জলে ভাসিয়ে অখিল কুমার বিশ্বাস এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। অনিয়ম আর সীমাহীন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত তিনি। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের আলোকে দুদক শিগগিরই অনুসন্ধানে নামছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মালিকানাধীন এশিয়ান ড্রেজার লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। সূত্র জানায়, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) প্রকল্পের মেয়াদ বারবার বৃদ্ধি করে দীর্ঘ ১০ বছরে কাজ হয়েছে খুব সামান্যই। এভাবে নদী খননের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এশিয়ান ড্রেজিং লিমিটেড। আবার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার নদী খননের কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ড্রেজিং লিমিটেড পেলেও তারা সাব ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছে। ৯৪৪ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালে প্রকল্পটি নেওয়ার পর তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত করা হয়। তবে ৩ বছরের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে লাগতে পারে ১১ বছর! পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালের এপ্রিলে নেওয়া প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। এতেও কাজ না হওয়ায় সর্বশেষ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধনের সময় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ ঠিক করা হয়। এক্ষেত্রে মূল ডিপিপির তুলনায় ৬ বছর ৬ মাস বা ১৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ সময় বেশি লাগছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাও ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর কারণে নতুন করে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১২৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, নদী খননের কাজ টাঙ্গাইল অংশে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে। এর মধ্যে কালিহাতী অংশে এশিয়ান ড্রেজিং লিমিটেড। তবে নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে, নদী খননের কাজে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজেরাই করবেন এবং এতে কোনো সাব ঠিকাদার বা নিষিদ্ধ বাংলা ড্রেজার ব্যবহার করা যাবে না। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম ছিল ভূমি অধিগ্রহণ, গাইড বাঁধ নির্মাণ, কায়িক শ্রম ও ড্রেজারের মাধ্যমে নদী খনন, সেডিমেন্টবেসিন নির্মাণ ও সংরক্ষণ কাজ, ব্রিজের ফাউন্ডেশন ট্রিটমেন্ট এবং পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং করা। কিন্তু এশিয়ান ড্রেজিং লিমিটেড নীতিমালার অধিকাংশই মেনে চলেনি।

সর্বশেষ খবর