বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

দল নিবন্ধন আইনের খসড়ায় ইসির অনুমোদন

মাহবুব তালুকদারের আপত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও একজন নির্বাচন কমিশনারের বিরোধিতার মধ্যে প্রস্তাবিত ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের খসড়া’ অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল নির্বাচন কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। অন্যদিকে ইসির সভায় প্রস্তাবিত এই আইনের বিরোধিতা করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি এই আইনের বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে সভায় ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছেন। বলেছেন, বাধ্য হয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি। আরপিওর অংশবিশেষ নিয়ে পৃথকভাবে আইন প্রণয়ন হঠকারী সিদ্ধান্ত। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গেল জুনে আইন সংস্কার নিয়ে সবার মতামত নেয় ইসি। মতামত নেওয়ার এক মাসের মধ্যে দল নিবন্ধনের খসড়া নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। গতকাল সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন, ২০২০ এর খসড়া নিয়ে মতামত পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে’ ইসির ৭০তম সভা হয়। পরে সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, সার্বিক দিক পর্যালোচনায় সংযোজন-বিয়োজন করে কিছু নির্দেশনাসহ খসড়া আইনের অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সংযোজন-বিয়োজন করে কমিশনারদের কাছে উপস্থাপন করা হবে। কমিশন দেখে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে। এর আগে সভায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) থেকে আলাদা করে প্রস্তাবিত ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের’ বিরোধিতা করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। বাধ্য হয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি : কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, ভিন্নমত অবশ্যই প্রকাশিত হতে হবে। প্রকাশিত না হলে ভিন্নমত দেশের মানুষ জানতে পারল না। আমি যতবার নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি তা বাধ্য হয়েই দিয়েছি। সমঝোতার পথ খুঁজে পাচ্ছেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমি সমঝোতার কোনো পথ খুঁজে পাইনি। এখানে কিছু বিষয় রয়েছে যাতে কোনো সমঝোতা হয় না। আমি এখানে বলেছি আইনের প্রয়োজনীয়তা নেই। তারপরও আমার কথাটা তো কেউ মেনে নিচ্ছে না। যার জন্য রেকর্ড দেখার জন্য আমি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি। লিখিত বক্তব্যে এ নির্বাচন কমিশনার দল নিবন্ধন আইনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমি এই সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করি। আরপিওর অংশবিশেষ নিয়ে পৃথকভাবে আইন প্রণয়ন হঠকারী সিদ্ধান্ত। এই প্রস্তাব গৃহীত হলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ -এর অঙ্গহানি ঘটবে, যাতে একে বিকলাঙ্গ মনে হবে। তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলো ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ৫০টি মতামত পাওয়া গেছে, তাতে এসব পদ-পদবি পরিবর্তনের বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। এ নির্বাচন কমিশনার মনে করেন, খসড়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনে নানারূপ মতদ্বৈধতা ছিল। আইনটি মতামত যাচাইয়ের পূর্বে অধিকতর যাচাই-বাছাই ও এর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনার প্রয়োজন ছিল। কী কারণে বা কোন যুক্তিতে এই পরিবর্তন প্রয়োজন, তা আমার বোধগম্য নয়। তবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আরপিও সংশোধন করা যেতে পারে। যা পূর্বে করা হয়েছে। আমি মনে করি, আইনের পরিবর্তন আইন কমিশনের কাছে ন্যস্ত থাকাই সমীচীন। এ অবস্থায় ‘রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আইন, ২০২০’ সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করে আমি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি। আলাদা নিবন্ধন আইনের বিষয়ে ইসির যৌক্তিকতার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন সচিব : আইনটির বিষয়ে ইসির সচিব জানান, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিষয়টি ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ছিল না। ২০০৮ সালে আরপিওতে তা যুক্ত করা হয়েছে। আলাদা আইনের কথা থাকলেও তখন সময়ের অভাবে তড়িঘড়ি করে এটিকে আরপিওতে যুক্ত করা হয়।

বর্তমান কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়টি আলাদা করে আইন করার প্রয়োজন মনে করছে। তারা মনে করছে আইনের এই অংশটি আরপিও থেকে বের করে স্বতন্ত্র করা উচিত। তাছাড়া আপনারা জানেন সরকারের একটি সিদ্ধান্ত আছে সব আইন বাংলায় প্রণয়ন করার। যার কারণে এটি বাংলায় করা হচ্ছে। তিনি জানান, সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার পরিষদ দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু নিবন্ধনের বিষয়টি আরপিওতে থাকলে তা কেবল সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য হয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকের জন্য আলাদা আইন এর প্রয়োজন পড়বে। আরপিও থেকে নিবন্ধনের চ্যাপ্টারটি বের করে একটি স্বতন্ত্র আইন করা হলে এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। নিবন্ধন আইনের ওপর মতামত পাওয়ার বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা ১৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠনসহ ৪১ প্রতিনিধির মতামত নিয়েছি। এটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কমিশন সভায় তুলে ধরা হয়েছে। যেটি গ্রাহ্য সেটা কমিশন গ্রহণ করেছে। যেটি অগ্রাহ্য সেটি কমিশন গ্রহণ করেনি।

সর্বশেষ খবর