বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

কৃষ্ণাঙ্গকে গুলি করা নিয়ে ফের বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র, নিহত ২

প্রতিদিন ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের কেনোশা শহরে চলমান বিক্ষোভে গুলি চালানোর পর উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত রবিবার শ্বেতাঙ্গ পুলিশ জ্যাকব নামে এক কৃষ্ণাঙ্গকে গুলি করার পর রাস্তায় নেমে পড়েন লাখ লাখ মানুষ। এরপর মঙ্গলবার রাতে বিক্ষোভে আবার গুলি চালায় পুলিশ। এতে তিন বিক্ষোভকারী আহত হন। পরে দুজন মারা গেছেন। অপর আহতর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। সূত্র : রয়টার্স।

গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রবিবার জ্যাকব ব্ল্যাক নামের ওই ব্যক্তি পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার পরই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে পুরো কেনোশা শহর। অনলাইনে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, কেনোশার রাস্তায় সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করছিলেন, এমন সময় গুলির ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা  গেছে। সেখানে আসলে কী ঘটেছিল তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত ন্যাশনাল গার্ড সদস্য পাঠিয়েছেন উইসকনসিনের গভর্নর।

যেভাবে বিক্ষোভ ছড়াল : ব্ল্যাকস আহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কয়েকশ লোক কেনোশার পুলিশ প্রধানের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন। তারপরে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন তারা। ডাকাতি, লুটপাট এবং গোলাগুলির অসংখ্য অভিযোগ আসতে থাকায়, স্থানীয় পুলিশ ২৪ ঘণ্টার জন্য দোকানপাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার আহ্বান জানায়। সোমবার গভর্নর এভার্স স্থানীয় পুলিশকে সহায়তার জন্য ন্যাশনাল গার্ডের সহায়তা চান। কেনোশায় জারি করা হয় রাত্রিকালীন কারফিউ। বিক্ষোভকারীরা জানান, ন্যাশনাল গার্ডের সহযোগিতায় তাদের বিরুদ্ধে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট, স্মোক বোমা নিক্ষেপ করেছে। এ সময়, কিছু বিক্ষোভকারী ব্যক্তিগত গাড়ি, সম্পদে বেসবলের ব্যাট হামলা চালান। পরদিন মঙ্গলবার কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী শহরজুড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। তাদের মধ্যে ছোট একটি দল পুলিশকে লক্ষ্য করে আতশবাজি এবং পানির বোতল নিক্ষেপ করে। জবাবে রাবার বুলেট এবং টিয়ার গ্যাস ছুড়ে পুলিশ। এ সময় পুলিশের গুলিতে আরও তিনজন আহত এবং পরে দুজনের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পোর্টল্যান্ড, অরিগেন, মিনিয়াপোলিস, মিনেসোটাও রয়েছে।

পুলিশের বক্তব্য : পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার ঘটনাস্থলে তারা ঘরোয়া একটি অভিযানে অংশ নিয়েছিল। এর বেশি কোনোকিছু তারা জানায়নি। কে পুলিশকে ঘটনাস্থলে ডেকেছে, কতজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন, গুলি চালানোর আগে কী হয়েছিল, এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো স্পষ্ট হয়নি।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতে যাবেন জ্যাকব, এমন সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা তার শার্ট চেপে ধরে গুলি চালায়। ভিডিওতে ৭টি গুলির শব্দ শোনা গেছে। এ সময় উপস্থিত যারা ছিলেন তারা ভয়ে চিৎকার করছিলেন। জ্যাকবের বাগদত্তা লাকুইশা বোকার বলেন, বাচ্চারা গাড়িতে বসা ছিল। তারা পুরো ঘটনা নিজের চোখে দেখেছে। তারা ভয়ে কাতরাতে ছিল। যখন তাদের বাবাকে গুলি করা হয়। জ্যাকবের আইনজীবী জানান, পুলিশ বিষয়টিকে ঘরোয়া ঘটনা আখ্যা দিয়ে অবহেলার চেষ্টা করছে। প্রত্যক্ষদর্শীরাও স্থানীয় গণমাধ্যমে এ অভিযোগ তোলেন। আদালতের রেকর্ডে দেখা গেছে, যৌন নির্যাতন এবং পারিবারিক নিপীড়নের অভিযোগে জ্যাকবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। এ কারণে পুলিশ গুলি চালিয়েছে কিনা তা খোদ নিরাপত্তা বাহিনীই জানে না। উইসকনসিনের বিচার বিভাগ ঘটনার তদন্ত করছে। সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তাদের অভিযুক্ত করার দাবি জানিয়ে একটি পিটিশনে সই করেছেন কয়েক হাজার মানুষ। তবে তদন্তের ওপর অনাস্থা জানিয়েছেন জ্যাকবের বাবা। শ্বেতাঙ্গদের বিষয়ে নিরাপত্তা বাহিনী যতটা তৎপর কৃষ্ণাঙ্গদের বিষয়ে ঠিক ততটাই উদাসীন, যা মোটেও কাম্য নয়।

জ্যাকবের বর্তমান অবস্থা : মঙ্গলবার তার আইনজীবী বেন ক্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলির কারণে প্যারালাইজড হয়ে গেছেন জ্যাকব। জ্যাকবের পরিবার এখন অবিশ্বাস্য কিছু ঘটার আশায় আছেন। কিন্তু মেডিকেল ডায়াগনসিসের রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি এখন প্যারালাইজড। গুলিতে তার মেরুদন্ড ছিদ্র হয়ে গেছে। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে কিছু কাশেরুকা। মিরাকেল কিছু না হলে জ্যাকব ব্ল্যাকসের পক্ষে আর উঠে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।

আইনজীবী জানিয়েছেন, যখন জ্যাকবকে গুলি করা হয় তখন গাড়িতে তার তিন ছেলে বসা ছিল। গুলিতে ২৯ বছর বয়সী এ কৃষ্ণাঙ্গের পেট ছিদ্র হয়েছে। তাকে পেছন থেকে গুলি করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাহু, কিডনি এবং লিভার।

সর্বশেষ খবর