মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

নাম পরিবর্তন হচ্ছে না স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিতর্কের মুখে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) থাকা প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও হারাতে চায় না সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। নির্বাচন ভবনে দুই দফায় অনুষ্ঠিত কমিশনের মুলতবি সভায় তিনজন কমিশনার নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে অনড় অবস্থান নেন।  সভায় বিদ্যমান নাম বহাল রেখে ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আইন-২০২০’ এর খসড়া অনুমোদন করা হয়। ওই খসড়া মতামতের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। বেলা ১১টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশনের মুলতবি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিইসি ও তিনজন নির্বাচন কমিশনার অংশ নেন। জানা গেছে, সভার শুরুতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের বিপক্ষে অবস্থান নেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। নাম পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নেন সিইসি। পরে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নাম পরিবর্তন থেকে সরে আসে কমিশন। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার আগেই এ বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেন। তবে তিনি গতকালের সভায় ছিলেন না। সভা শেষে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নাম ও পদবির নামগুলোতে প্রচলিত শব্দগুলোই রাখা হবে। এক্ষেত্রে বর্তমানে ব্যবহৃত নাম ও পদবিতে কোনো পরিবর্তন হবে না। তিনি বলেন, সরকারের অন্যান্য আইনে যেভাবে শব্দগুলো রয়েছে, সেভাবেই খসড়া আইনগুলোতে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসাটা কমিশনের দুর্বলতার পরিচয় কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি প্রস্তাবনা তার ওপরেই আলোচনা হচ্ছে। আইন যতক্ষণ না সংসদে পাস হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি পরিবর্তন, পরিবর্ধন হতে পারে।

আরপিওকে বাংলা আইনে রূপান্তর করার খসড়ায় প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা বাদ দেওয়াসহ অর্থাৎ আরপিওর ৯১(ই) ধারাসহ ১০টি মৌলিক বিষয় তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেই বিষয়গুলো আইনের বিধিমালায় যুক্ত করতে চেয়েছিল ইসি। এ বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, নিজের ক্ষমতা নিজে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কমিশনের কোনো ক্ষমতাই খর্ব করা নয়, বরং যা আছে মৌলিক, তার সবই ঠিক থাকবে। আইনের (আরপিও) মৌলিক কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না, শুধু বাংলায় করা হচ্ছে। এটিকে আইনেও রূপান্তর করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, আরপিওটি অনেক বড় আইন। এটাকে ছোট করার প্রস্তাব এসেছে। এজন্য বলা হয় যে, যেটি আইনে দরকার নেই, সেটি বিধিমালায় যাবে। মো. আলমগীর বলেন, প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা বিধিতে রাখতে গিয়ে হয়তো কমিশন আইন থেকে ভুল করে হোক বা বোঝাপড়ার মাধ্যমে হোক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এটা আইনে থাকবে না, বিধিতে যাবে। আর আইন মন্ত্রণালয় বলেছে যে, এটা কোর্টের বিষয়। আর কোর্টের বিষয় বিধি রাখা যায় না। তারা নয়-দশটা বিষয় আইনেই রাখতে বলেছে। তিনি বলেন, কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, আইনে না থাকলেও বিধিতে রাখা হতো। যেহেতু আইন মন্ত্রণালয় সেহেতু আইনেই রাখতে বলেছে এটাকে শক্তিশালী রাখার জন্য, তাই আইনেই রাখা হচ্ছে।

জানা গেছে ‘রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন-২০২০’ এবং ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আইন-২০২০’ এর খসড়ায় ইউনিয়ন পরিষদের নাম পরিবর্তন করে ‘পল্লী পরিষদ’, পৌরসভার নাম পরিবর্তন করে ‘নগরসভা’ ও মেয়রের পদবি পরিবর্তন করে ‘পুরাধ্যক্ষ’ রাখার প্রস্তাব করে ইসি। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের নাম ‘মহানগর সভা’ ও সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদবি পরিবর্তন করে ‘মহানগর আধিকারিক’ এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে ‘উপজেলা পরিষদপ্রধান ও উপপ্রধান’ প্রস্তাব করেছিল ইসি।

সর্বশেষ খবর