বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রপ্তানি বাড়াতে ৮ কৌশল প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রপ্তানি বাড়াতে ৮ কৌশল প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে

কভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য একটি কর্মকৌশল তৈরি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যেটি এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে রয়েছে। গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সভায় বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন এই কৌশলপত্র উপস্থাপন করেন যেখানে ৮টি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রগুলো জানায়, প্রধানমন্ত্রী সামনে রপ্তানি বাড়ানোর কৌশলগুলো উপস্থাপনের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে ছিল, সম্ভাবনাময় পণ্য রপ্তানিতে অনুদান ও নগদ সহায়তা প্রদান, বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনুসারে পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ, দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিদেশি উদ্যোক্তাদের যোগাযোগ তৈরি এবং সম্ভাবনাময় পণ্যের গুণগত মান বাড়ানোর লক্ষ্যে বেসরকারি খাতকে প্রযুক্তি ও নীতি সহায়তা দেওয়া। প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপিত কর্মকৌশলগুলো ছিল এরকম : (১) প্লাস্টিক, হালকা প্রকৌশল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং ফুটওয়্যার) সম্ভাবনাময় এই চার খাতের পণ্যের মান ও ডিজাইন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করা;  (২) কভিড-১৯ প্রতিরোধী মেডিকেল ইকুইপমেন্ট (মাস্ক, পিইপি, গ্লাভস ইত্যাদি) রপ্তানি উৎসাহিত করতে সাড়ে ৭ মিলিয়ন ডলারের অনুদান প্রদান; (৩) গত অর্থবছরের প্রকৃত রপ্তানি আয়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে চলতি অর্থবছরে যাতে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের (পণ্যে ৪১ বিলিয়ন ডলার, সেবা খাতে ৭ বিলিয়ন ডলার) রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়, সে লক্ষ্যে ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি, বিভিন্ন খাতের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে নীতি সহায়তা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ;

(৪) বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ), অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করার জন্য প্রক্রিয়া গ্রহণ; ৪৩টি দেশের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তির আওতায় আর্থিক ও অ-আর্থিক বাণিজ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে মিশনগুলোর কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং বৈদেশিক মিশনগুলোর কার্যক্রমে গতি আনতে নিয়মিত দিক-নির্দেশনার পাশাপাশি মিশনে কর্মরত কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া;

(৫) রপ্তানি সম্ভাবনা ও মূল্যসংযোজনের ব্যাপ্তি বিবেচনায় বিদ্যমান ৩৫টি পণ্যের পাশাপাশি নতুন ১৯টিসহ মোট ৫৪টি পণ্য রপ্তানির বিপরীতে বিভিন্ন হারে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান এবং বিদ্যমান হার যৌক্তিক পর্যায়ে পুনর্নির্ধারণের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়ন করে অর্থ বিভাগে  সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব প্রেরণ;

(৬) আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট পণ্যের বিকাশে প্রকল্প গ্রহণ; এর অংশ হিসেবে প্রথমে আইসিটি ও হালকা প্রকৌশল পণ্যের জন্য পৃথক দুটি প্রকল্প প্রস্তাব গ্রহণ করা;

(৭) বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক ও হালাল খাদ্যপণ্য রপ্তানির জন্য ওই দেশের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের কার্যকর বাণিজ্য যোগাযোগ স্থাপনে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস ও বাণিজ্যিক উইংকে পরামর্শ প্রদান এবং নিয়মিত মনিটরিং করা; এবং (৮) প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে এরই মধ্যে যেসব দেশের মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ে সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে ফলোআপ কার্যক্রম পরিচালনা করা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রপ্তানি বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকৌশল প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপনের পর তিনি এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ করে কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বাণিজ্য সচিব বলেন, আমাদের প্রচলিত পণ্যের পাশাপাশি নতুন পণ্যকে উৎসাহিত করতে হবে। পণ্যের মান ও ডিজাইন আন্তর্জাতিক মানে উন্নত করতে নতুন টেকনোলজি সেন্টার নির্মাণ, কারখানার উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য অনুদান, নগদ সহায়তা ছাড়াও প্রণোদনামূলক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।   

সচিব জানান, আমাদের কিছু কৌশল রয়েছে যেমন অঞ্চলভিত্তিক পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে হালাল খাবারের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এই সুযোগটি গ্রহণ করতে পারেন। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক ও হালাল খাদ্য রপ্তানি বাড়াতে দেশের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমদানিকারক দেশগুলোর উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ ঘটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান বাণিজ্য সচিব। তিনি বলেন, এ কাজটি সমন্বয় করার জন্য বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে কর্মরত কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর