শিরোনাম
বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন তিন কর্মকর্তা

আদালত প্রতিবেদক

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার সোনালী ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখার হিসাব বিবরণী আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। সোনালী ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখার জ্যেষ্ঠ প্রিন্সিপাল অফিসার আতিকুল ইসলাম আদালতে এসব কাগজপত্র জমা দেন। আদালতকে এই ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে তাদের শাখার গ্রাহক সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে মোট চার কোটি টাকা জমা হয়। আতিকুল ইসলাম জানান, গত বছর ৩০ জুলাই দুদকের পরিচালক বেনজির আহমেদ তাদের ব্যাংকে আসেন। তিনি বেশ কিছু কাগজপত্র জব্দ করেন, যা তার জিম্মায় দিয়ে আসেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে করা দুদকের মামলায় সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম  কোর্ট শাখার এই কর্মকর্তা ছাড়া আরও দুজন ব্যাংক কর্মকর্তা গতকাল আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন সোনালী ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখার জ্যেষ্ঠ প্রিন্সিপাল অফিসার সাখাওয়াত হোসেন ও সিনিয়র অফিসার আওলাদ হোসেন। গতকাল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এই সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করা হয়েছে আগামী ৪ অক্টোবর। এ নিয়ে এই মামলার ১৮ জনের মধ্যে সাতজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলো। গতকাল তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীকে (বাবুল চিশতী) কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এ ছাড়া আদালতে হাজির ছিলেন জামিনে থাকা মামলার আসামি ফারমার্স ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ক্রেডিটপ্রধান গাজী সালাহউদ্দিন, ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীম, ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা। মামলায় পলাতক আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখার ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুল হক, এস কে সিনহার কথিত পিএস রণজিৎ চন্দ্র সাহা এবং রণজিতের স্ত্রী সান্ত্রী রায় সিমি। এর আগে গত বছর ৯ ডিসেম্বর সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। পরে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এ পাঠানো হয়। মামলাসূত্রে জানা গেছে, ভুয়া তথ্য দিয়ে পরস্পর যোগসাজশে জনৈক মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুটি চলতি হিসাব খোলেন। পরদিনই তারা দুই কোটি করে চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। ব্যাংকে হিসাব খোলা এবং ঋণ আবেদনপত্রে দুজনই তাদের ঠিকানা বাড়ি নম্বর ৫১, সড়ক নম্বর ১২, সেক্টর ১০, উত্তরা আবাসিক এলাকা উল্লেখ করেন। ওই বাড়ি সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ব্যক্তিগত বাড়ি। মামলায় আরও বলা হয়, অসৎ উদ্দেশে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ-সংক্রান্ত আবেদন দুটি কোনো রকম যাচাই-বাছাই, রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ না করে এবং ব্যাংকের কোনো নিয়ম-নীতি না মেনে শুধু গ্রাহকের আবেদনের ওপর ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক জিয়াউদ্দিন আহমেদসহ শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঋণপ্রস্তাব তৈরি করে হাতে হাতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যান। প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটির কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই ছাড়াই অফিস নোট তৈরি করে তাতে স্বাক্ষর দিয়ে সাবেক এমডি এ কে এম শামীমের কাছে নিয়ে যান। ফারমার্স ব্যাংকের ঋণনীতি অনুযায়ী ঋণ দুটির প্রস্তাব অনুমোদন করার ক্ষমতা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের না থাকা সত্ত্বেও তিনি এ-সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই বা নির্দেশনা না দিয়ে ওই ঋণপ্রস্তাব দুটির অনুমোদন দেন। ঋণ অনুমোদন হওয়ার পরদিনই অনুমোদিত চার কোটি টাকার পৃথক দুটি পে-অর্ডার সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে ইস্যু করা হয়। ওই পে-অর্ডার সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার হিসাবে জমা হয়। পরে তিনি বিভিন্ন সময়ে অস্বাভাবিক ক্যাশ ও চেক/পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলেন। পরে ঘটনার তদন্ত করে ৯ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক পরিচালক বেনজির আহমেদ ১১ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে সেই টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, উত্তোলন ও পাচার করেছেন, যা দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সর্বশেষ খবর