বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব হচ্ছে না ৬ লাখ অভিবাসীর

বাংলাদেশি ১০ সহস্রাধিক

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর ১০ সহস্রাধিক বাংলাদেশিসহ প্রায় ৬ লাখ মার্কিন গ্রিনকার্ডধারীর নাগরিকত্বের স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে। ব্যাপক আগ্রহ সত্ত্বেও তারা কেউই নভেম্বরের নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না। এর ফলে অভিবাসী সমাজে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। করোনার কারণে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইউএসসিআইএসের (ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস) অ-জরুরি সব কাজকর্ম বন্ধ থাকার নির্দেশ জারি করেছে। এ কারণে পারিবারিক কোটা, বিনিয়োগ কোটা ও বিশেষ ক্যাটাগরিতে গ্রিনকার্ডের ভিসা স্থগিত রয়েছে। নাগরিকত্বের জন্য ৯ থেকে ১০ মাস আগে আবেদনকারীদের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানা গেছে।

ইউএসসিআইএস অফিসের পদস্থ এক কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, ট্রাম্পের কঠোর নীতির কারণে অভিবাসীদের গড়া এই যুক্তরাষ্ট্রে আজ তারাই নিগৃহীত। লাখ লাখ অভিবাসীর কাছ থেকে নির্ধারিত ফি নিয়ে আবেদন নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। এটা কোনোভাবেই ন্যায়-নিষ্ঠার আওতায় পড়ে না। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরে সমাপ্ত চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় পতিত হয়েছে ইউএসসিআইএস। এর জের হিসেবে আর্থিক সংকটেও পড়েছে এ দফতর। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক ধরনের হতাশার মধ্যে কাজ করছেন। গত অর্থবছর ৮ লাখ ৩৪ হাজার অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভে সক্ষম হয়েছেন। তাদের মতো এবারের আবেদনকারীরাও নভেম্বরের নির্বাচনে ভোট দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে স্বপ্ন উবে গেছে। জানা গেছে, ২০১৬ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পরই গ্রিনকার্ডধারীদের মধ্যে নাগরিকত্ব লাভের হিড়িক পড়ে যায়। কারণ, মামুলি অপরাধের জন্যও গ্রিনকার্ড কেড়ে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা যায়। তবে নাগরিক হলে তা সম্ভব হয় না। ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী দমন-পীড়নের আতঙ্কে আগে যারা নাগরিকত্ব গ্রহণে আগ্রহী ছিলেন না তারাও দলে দলে আবেদন করেন। ফলে গত তিন বছরে সবচেয়ে বেশি মানুষ নাগরিক হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এ কৃতিত্ব ট্রাম্পের নয়। ট্রাম্পের দমন-পীড়ন ভীতির পরিপ্রেক্ষিতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় বলে অভিবাসীদের অধিকার-মর্যাদা নিয়ে কর্মরতরা মন্তব্য করেছেন।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী করোনার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এ মাসে ৪ শতাধিক অভিবাসী নাগরিক হিসেবে শপথ নিয়েছেন। অথচ গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত নাগরিকত্বের আবেদনের সংখ্যা ছিল ৭ লক্ষাধিক। ইউএসসিআইএসের তথ্যানুযায়ী মধ্যমার্চে সারা আমেরিকা লকডাউনে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৪৯ আবেদনের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছিল। মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা সারাহ পিয়ারেস বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অনাগ্রহের কারণে নাগরিকত্বের আবেদনগুলো ফাইলবন্দী। এদিকে, রিপাবলিকান পার্টির সম্মেলনের সময় হোয়াইট হাউসে পাঁচজনের নাগরিকত্ব গ্রহণের শপথ অনুষ্ঠান হয়েছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী চাদ উলফ এ শপথ পরিচালনা করেন। পাশেই ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। নতুন নাগরিকদের স্বাগত জানিয়ে এ সময় ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সব সময় অভিবাসীদের স্বাগত জানায়। আমেরিকা এ পাঁচজনকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। আপনারও আজ আমেরিকা পরিবারের সদস্য হলেন।’ তবে এটি সরাসরি টিভিতে সম্প্রচারিত হওয়ায় ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা শুরু হয়েছে কমিউনিটিতে। এদিকে, পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্যানুযায়ী আসন্ন নির্বাচনে ভোটারের মধ্যে ২ কোটি ৩২ লাখ হলেন অভিবাসী। তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোট দিলে যে কোনো প্রার্থীর বিজয়ের ক্ষেত্রে বড় একটি কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেছে এ গবেষণা সেন্টার।

সর্বশেষ খবর