বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ভ্যাকসিন রাজনীতিতে শীর্ষে থাকতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

প্রতিদিন ডেস্ক

করোনা প্রতিরোধক ভ্যাকসিন রাজনীতিতে রাশিয়া-চীনকে টেক্কা দিতে যুক্তরাষ্ট্র তড়িঘড়ি অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়তে চাইছে। এ ক্ষেত্রে তারা নিয়ম-নীতির বিষয়কে তেমন গুরুত্ব নাও দিতে পারে। এমনকি এও বলা হয়েছে, সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিতকরণের উদ্যোগেও থাকবে না যুক্তরাষ্ট্র। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন।

খবরে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, তৃতীয় দফার ক্লিনিকাল ট্রায়ালে পৌঁছে গিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। আর যে সমস্ত সংস্থা ট্রায়ালের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে গেছে, সেই তালিকায় ঢুকে পড়ল অ্যাস্ট্রাজেনেকা।’ তিনি এ সময় বুক চাপড়িয়ে তার প্রশাসনের কৃতিত্ব প্রচার করে বলেন, ‘গত কয়েক মাসে করোনা ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে আমেরিকা যে অগ্রগতি করেছে, অন্য দেশের ক্ষেত্রে তা করতে গেলে বহু বছর লেগে যেত। আমেরিকায় আমরা যা করেছি, কেউ তা ভাবতেই পারে না। ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে আমেরিকা সঠিক পথে এগোচ্ছে। দেশবাসীকে দ্রুত ভ্যাকসিন উপহার দিয়ে আমরা নজির গড়ব।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকা খুব শিগগিরই ছাড়পত্র পাবে’। সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে গণহারে মানব শরীরে তা প্রয়োগ করারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, দ্রুত দেওয়া হবে সেই অনুমোদন। এদিকে মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের উপ-প্রধান পল ম্যাঙ্গো বলেন, গবেষকদের কাজে খুশি মার্কিন প্রশাসন। চলতি বছরের শেষে করোনা টিকার কোটি কোটি ডোজ তৈরি করাই এখন উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্যে যথাযথভাবে কাজ এগোচ্ছে। প্রসঙ্গত, ভ্যাকসিন রাজনীতিতে শীর্ষে থাকতে এরই মধ্যে আইনে রদবদল করে জরুরি ভিত্তিতে করোনা টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করতে মরিয়া ব্রিটেনও। রাশিয়া আগেই করোনার টিকা তৈরি করেই ফেলেছে। আবার ছাড়পত্রের পরোয়া না করে জরুরি ভিত্তিতে নিজেদের তৈরি করোনা টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেছে চীনও। খবরে বলা হচ্ছে, পরিস্থিতি সামলাতে চীনের পথেই এগোচ্ছে ব্রিটেন। তারা ছাড়পত্র পাওয়ার আগেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্বের টিকার ব্যবহার শুরু করতে চাইছে জরুরি ভিত্তিতে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, সাধারণত ভ্যাকসিনে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মানবদেহে তার কার্যকারিতা, তা কতটা নিরাপদ সব দেখে নেয় মেডিসিন রেগুলেটরি এজেন্সি। করোনার টিকার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হবে না। কিন্তু গোটা ব্যাপারটা সময়সাপেক্ষ। এখনো করোনার টিকা সেই ছাড়পত্র পায়নি। তাই জরুরি ভিত্তিতে টিকা ব্যবহারের জন্য ওষুধ সংক্রান্ত কিছু নিয়মকানুন বদলে নেওয়া হবে।

সবার জন্য ভ্যাকসিনে থাকছে না যুক্তরাষ্ট্র : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন প্রস্তুত, উৎপাদন ও সমবণ্টনের আন্তর্জাতিক উদ্যোগে থাকছে না যুক্তরাষ্ট্র। ডব্লিইএইচওকে দুর্নীতিগ্রস্ত আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন এই উদ্যোগে না থাকার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে সবার জন্য টিকা নিশ্চিতকরণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে গৃহীত ‘কোভ্যাক্স’ উদ্যোগে বড় ধাক্কা লাগতে পারে। ডব্লিউএইচও-এর পরিকল্পিত এই আন্তর্জাতিক উদ্যোগটির নাম কভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি (কোভ্যাক্স)। গত মাসে ডব্লিউএইচও জানিয়েছিল, তাদের উদ্যোগ কোভ্যাক্সে অংশ নিতে বিশ্বের ১৭০টি দেশ আলোচনা করছে। উদ্যোগটির সঙ্গে রয়েছে কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন ও দাতব্য সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। ‘কোভ্যাক্স’ নামের এই বিশেষ পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থাকছে না বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্ট। ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জাড ড্রি এক বিবৃতি দিয়েছেন। বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে টিকা ও থেরাপি গবেষণা, উন্নয়ন ও পরীক্ষা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এতে কার্যকর ও উদ্ভাবনী ওষুধ পাওয়া যাবে। এটি সরকারি কোনো লাল ফিতায় আটকে থাকবে না। ভাইরাসকে পরাজিত করতে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অংশীদারদের পাশে থাকবে, তবে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীন দ্বারা প্রভাবিত বহুপক্ষীয় সংস্থা দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকবে না।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে কোভ্যাক্সে অংশ নিতে বাধা আছে। তাদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রে যথেষ্ট করোনা টিকা উৎপাদনের কাজ চলছে এবং সেগুলো উন্নত পরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র একাই টিকা পাওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে চায়। তবে করোনার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক ওষুধ ও টিকা উদ্যোগ থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুখ ফিরিয়ে নিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

সর্বশেষ খবর