রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অবক্ষয়ের পেছনে অর্থনৈতিক সামাজিক কারণ

-ড. মাহফুজা খানম

অবক্ষয়ের পেছনে অর্থনৈতিক সামাজিক কারণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মাহফুজা খানম বলেছেন, সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের বিষয়গুলো এক দিনে তৈরি হয় না। মূলত সামাজিক অবক্ষয়ের পেছনে বেশ কিছু অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। এখন অনেক পরিবারই অসচ্ছলতায় রয়েছে। করোনাকালে মানুষের সহিংস আচরণ করার একটি বড় কারণ হচ্ছে অসচ্ছলতা। এর পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয়ের পেছনে কিছু মানসিক কারণও আছে। এখন দেখা যাচ্ছে, যে স্ত্রীরা সব সময় চুপচাপ ছিলেন তারা হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন। আবার যে স্বামীরা সব সময় ভদ্র আচরণ করতেন বিভিন্ন মানসিক চাপে এখন তিনিও সামান্যতেই ‘ওভার রিঅ্যাক্ট’ করছেন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন তিনি। এই অধ্যাপক বলেন, প্রতিটি সমাজেরই নিজস্ব কিছু রীতিনীতি থাকে। নাগরিকরা সেগুলো অনুসরণ করে। সময়ের সঙ্গে এ রীতিনীতিগুলো বদলায়। কিন্তু বদলায় খুব ধীরগতিতে। আর এ পরিবর্তন খুব সহজে চোখে পড়েও না। আমাদের সমাজের রীতিনীতি অনুযায়ী ছোটরা বড়দের শ্রদ্ধা করবে এবং বড়রা ছোটদের ¯েœহ করবে। কিন্তু এসব রীতিনীতি সময়ের সঙ্গে একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে। যদি আমরা এক-দুই আগের প্রজন্মের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করি তাহলে সে পরিবর্তন টের পাই। ড. মাহফুজা খানম বলেন, করোনাকালে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা ও উদ্বেগ বেড়েছে। এ কারণে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষ সামান্যতেই এখন খিটখিটে হয়ে পড়ছে। সব মিলিয়ে তারা এক ধরনের অনিরাপত্তায় ভুগছে। মানুষ এখন শারীরিক নিরাপত্তার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তার অভাবও বোধ করছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার সামাজিক রীতিনীতি বা সংস্কৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কারণ তরুণ ও কিশোর-কিশোরীরা ইন্টারনেটে ভিন্ন সংস্কৃতির যে সহিংস ভিডিওগুলো দেখছে তা দেখেই তারা তৎক্ষণাৎ সেই কর্মকা- ঘটাতে চাচ্ছে। আবার সমাজে যারা নিম্ন শ্রেণির তাদের ঘরেও এখন টেলিভিশন ঢুকে পড়েছে। আর টেলিভিশনে বাইরের সংস্কৃতি, বিশেষ করে ভারতীয় বিভিন্ন সহিংস অনুুষ্ঠান তারা দেখছে যেখানে সুস্থ পরিবারের কোনো ছবি প্রদর্শন করা হচ্ছে না। আর এ ধরনের অনুষ্ঠান দেখে মানুষ সহিংস আচরণে উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়ছে। ঢাবির এই অধ্যাপক আরও বলেন, মানুষের মধ্যে সামাজিক অবক্ষয়ের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। রাষ্ট্রকে ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা মেনে চলতে হবে।

সর্বশেষ খবর