রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন

প্রার্থী বদল বা নতুন প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ নেই

গোলাম রাব্বানী

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তথা আগামী বছরের জানুয়ারিতে এ সিটির নির্বাচন করবে কমিশন। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি কমিশনের রয়েছে। এক্ষেত্রে মেয়র পদে প্রার্থিতা বদলের সুযোগ থাকবে না। নির্বাচনী কার্যক্রম যে অবস্থায় স্থগিত হয়েছিল, সেই অবস্থা থেকেই আবারও শুরু হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সম্প্রতি কমিশনের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গেল ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ভোট অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু করোনা প্রকোপের কারণে গত ২১ মার্চ এ নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। তখন ওই সিটির নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চলছিল।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনী কার্যক্রম যে অবস্থায় স্থগিত হয়েছিল, কমিশন ভোট অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত দিলে ঠিক সেই অবস্থা থেকে আবারও নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে। এ সিটির নির্বাচনের ভোট গ্রহণের আগে প্রার্র্থীরা প্রায় এক সপ্তাহ প্রচারণার সুযোগ পাবেন। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নতুন করে তফসিল ঘোষণার প্রয়োজন হবে না। এক্ষেত্রে মেয়র ও কাউন্সিলর পদের প্রার্থিতা বদলেরও সুযোগ থাকবে না। তবে আইন অনুযায়ী কোনো প্রার্থী মৃত্যুবরণ করলে ওই পদে জন্য পুনঃতফসিল ঘোষণা করবে কমিশন।

জানা গেছে, করোনাকালে কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী মৃত্যুবরণ করেছেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে নির্বাচন বাতিল হবে। পুনঃতফসিল দিয়ে নতুন প্রার্থী অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করবে কমিশন। তবে যদি কোনো মেয়র প্রার্থী মৃত্যুবরণ করেন, তখন মেয়র পদের নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফসিল দিয়ে নতুন প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ দেবে ইসি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংসদীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে দিনক্ষণ আছে, সেটা বাধ্যতামূলক। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। নির্বাচন কমিশন যে কোনো দিন সময় বাড়াতে পারে। ইসি ইচ্ছা করলে ৫-১০ বারও সময় বাড়াতে পারে। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন স্থগিত পর্যায় থেকে আবার শুরু হবে। তিনি বলেন, যদি কোনো পদে তথা বিশেষ করে মেয়র পদে যারা বৈধ প্রার্থী রয়েছেন, (আল্লাহ না করুক) তাদের কেউ যদি মারা যান, সেক্ষেত্রে ওই পদের জন্য তখন পুনঃতফসিল দিতে হবে।   

সিটি নির্বাচনের বিধিমালায় বলা হয়েছে- ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ১০ এর ২০ বিধি অনুসারে ভোট গ্রহণের পূর্বে বৈধভাবে মনোনীত কোনো প্রার্থীর মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট পদের নির্বাচনী কার্যক্রম রিটার্নিং অফিসার গণবিজ্ঞপ্তি দ্বারা বাতিল করবেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানাবেন।

এর আগে ইসির বৈঠক শেষে ইসির সিনিয়র সচিব বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও ছয় মাসের মধ্যে (আগামী বছরের জানুয়ারি) হবে। সচিব বলেন, সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার মেয়াদ থাকবে ১৮০ দিন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৩০/৪০ দিন হাতে রেখে নির্বাচন করা হবে। তিনি বলেন, এ সিটির স্থগিত নির্বাচন করতে মূলত ১০ দিন সময় হলেই চলবে। উল্লেখ্য, গত ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন খোরশেদ আলম সুজন। ওই দিন সকাল পৌনে ১০টায় চসিক প্রশাসকের চেয়ারে বসেন তিনি। তার আগের দিন তথা ৫ আগস্ট চসিকের পঞ্চম নির্বাচিত পরিষদের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের মেয়াদ শেষ হয়।

মেয়র পদে রয়েছেন ৬ প্রার্থী : চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপির শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন, পিপলস পার্টির আবুল মনজুর, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম। গত ৮ মার্চ প্রার্থী প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। এরপর মেয়র পদে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ছয়জন রয়েছেন। এই নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বৈধ প্রার্থী রয়েছেন ২৬৯ জন। তবে গত ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর ৪-৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী মারা গেছেন। এসব ওয়ার্ডে নতুন করে প্রার্থী দেওয়া তথা নতুন তফসিল দিয়ে প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে ইসির চিঠি : গত ১৪ জুলাই নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল ৫ আগস্টের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে না। ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে পাঠানো হয়েছিল। চিঠিতে বলা হয়েছিল, বর্তমানেও করোনা প্রভাব অব্যাহত থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ধসের আশঙ্কা বিবেচনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়াদকালের মধ্যে অর্থাৎ ৫ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে না- বলে কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে। গত ২৯ মার্চ এ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে গত ২১ মার্চ সিটি নির্বাচন স্থগিত করা হয়। গত ৫ আগস্ট এ সিটির মেয়াদ শেষ হয়। এ সিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৫ সালে ৬ আগস্ট। আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের প্রথম সভার তারিখ থেকে পাঁচ বছর হবে এর মেয়াদ। আর করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে হয়। স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, নতুন সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হলে অথবা কোনো সিটি করপোরেশন বিভক্ত করা হলে অথবা কোনো সিটি করপোরেশন মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সরকার নতুন সিটি করপোরেশন গঠিত না হওয়া পর্যন্ত একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা কোনো কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে। প্রশাসকের কাজে সহায়তার জন্য সরকার প্রয়োজন মনে করলে একটি কমিটিও করে দিতে পারবে। প্রশাসক এবং সেই কমিটির সদস্যরা মেয়র ও কাউন্সিলরের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে ১৮০ দিনের বেশি দায়িত্বে থাকতে পারিবেন না প্রশাসক।

সর্বশেষ খবর