সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ

পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আসতে বিতর্কিতদের দৌড়ঝাঁপ

রফিকুল ইসলাম রনি

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরুতেই গ্রেফতার হওয়া যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদের ডানহাত শাহাদাৎ হোসেন সাধুকে করোনা চলাকালীন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ত্রাণ কমিটির সদস্য রাখেন দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী। সাধুর বিরুদ্ধে ক্যাসিনো পরিচালনা, বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়াসহ নানা অভিযোগ থাকায় ভালোভাবে নেননি ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। এই নিয়ে শুরু হয় তাদের বিরোধ। এখনো সুরাহা হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে এখনো বসতে পারেননি তারা। শুধু সাধুই নয়, এমন ২০-২২ জন বিতর্কিত, ক্যাসিনোবাজ, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের কমিটিতে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠছে একটি গ্রুপ। এদের কাউকে কাউকে কমিটিতে রাখতে কেন্দ্রীয় নেতাদের তদবিরও আছে। যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যা মামলার আলোচিত আসামি জাহিদুল ইসলাম টিটু মহানগর কমিটিতে থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

দলীয় সূত্রমতে, দীর্ঘ দশ মাসেও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটি না হওয়ার ফলে পদ-পদবি প্রত্যাশীরা পরিচয়হীনতায় ভুগছেন। কমিটি গঠনের ধীরগতি হওয়ায় বিতর্কিত ব্যক্তি, হাইব্রিডরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।

ঢাকা মহানগর কমিটিতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের না রাখতে দলীয় সভানেত্রীর কঠোর নির্দেশনা থাকলেও ‘মাইম্যান’ ও ‘ভবিষ্যৎ উত্তরসূরিদের’ রাজনীতি পাকাপোক্ত করতে তাদের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হচ্ছে। এ ছাড়াও সাবেক এক সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে স্কুলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হয়েছে। সেই বিতর্কিত নেতাও এবার কমিটিতে স্থান পেতে পারেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও অপ্রত্যাশিত কিছু ব্যক্তিকে কমিটিতে রাখার প্রতিশ্রুতির কথা জানা গেছে।

মহানগর আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা বলেছেন, সিটি নির্বাচন এবং করোনার কারণে মহানগর কমিটি গঠন করতে দেরি হয়েছে। আর কাউন্সিলররা হচ্ছেন ভোটের মালিক। তাই তাদের কমিটিতে রাখতে হবে। বিতর্কিত ব্যক্তি ও হাইব্রিডরা কমিটিতে নাম লেখাতে দৌড়ঝাঁপ করছেন বলেও স্বীকার করেছেন তারা।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দক্ষিণে আবু আহমেদ মন্নাফী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হুমায়ুন কবির এবং উত্তরে শেখ বজলুর রহমান সভাপতি ও এস এ মান্নান কচি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময় প্রথমে সাত দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর সিটি নির্বাচন চলে আসায় কমিটি গঠন থমকে যায়। মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নির্বাচিত কাউন্সিলর ও দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের পদে না রাখার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এখন কমিটিতে ‘মাইম্যান’ বসাতে নির্বাচিত কাউন্সিলর ও বিদ্রোহীদের রাখার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন পদপ্রত্যাশীরা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কাউন্সিলর সবাইকে কমিটিতে রাখা হবে না। যাদের সাংগঠনিক দক্ষতা আছে, এলাকায় প্রভাব আছে তাদেরই রাখতে হবে। কারণ তারা ভোটের মালিক। সিটি করপোরেশন বা ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ত্রাণ তাদের নামেই বরাদ্দ করা হয়। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তাদের বেশি। দু-একজন কাউন্সিলর আছেন, যারা অনিয়ম, অন্যায় করেন। বদনাম করেন। কিন্তু বেশির ভাগ কাউন্সিলরই ভালো কাজ করেন। কাজেই তাদের রাখতে হবে। কমিটি গঠন দেরি হওয়া প্রসঙ্গে আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, কমিটি নিয়ে আলোচনার ব্যাপার। নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এখনো বসতে পারিনি। আমার সাধারণ সম্পাদকের একটু অনীহা। বসতে চান না। আমি দশ জায়গায় গেলে উনি এক জায়গায় যান। এখন কমিটি করে ফেলব।

কমিটিতে ঢুকতে বিতর্কিত লোকদের দৌড়ঝাঁপ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, থানা, ওয়ার্ড কমিটিতেও কিছু দুই নম্বর লোক আছে। তারাই কমিটিতে নাম লেখানোর জন্য দৌড়াচ্ছে। মূলত তারা বাণিজ্য, ভিজিটিং কার্ড ও অন্যের ঘরবাড়ি দখল করার জন্য আছে।

মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ কাউন্সিলরদের রেখেছিল বলে শুনেছি। কিন্তু নেত্রী তালিকা ফেরত দিয়েছেন। আমরা নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে কাউন্সিলরদের কমিটিতে রাখার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’ কমিটি গঠনে দেরির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্মেলনের পর সিটি নির্বাচন, রাজধানীতে জাতীয় সংসদের একটি আসনে উপ-নির্বাচনের কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা যায়নি। তবে মার্চ মাসে আমরা একটা খসড়া তালিকা তৈরি করেছিলাম। কিন্তু এর মধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে কমিটি গঠনের কাজ পিছিয়ে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে ফেলব।

ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের দলের কোনো পর্যায়ের কমিটিতে রাখা যাবে না। আর দলের সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন যারা তারা সর্বোচ্চ সদস্য পদ পাবেন। অন্য কোনো পদে আসতে পারবেন না। এটাই দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে কমিটি নেত্রী অনুমোদন দেবেন না। 

এদিকে দীর্ঘদিনেও কমিটি না হওয়ায় নেতারা পরিচয়হীনতায় ভুগছেন। তারা নিয়মিত দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিলেও পরিচয় দিতে পারছেন না। কেউ মহানগরের সাবেক নেতা, কেউ সাবেক ছাত্রনেতা। আবু আহমেদ মন্নাফী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই তার সঙ্গে সব সময় থাকেন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ। মহানগরের কর্মসূচি সফল করতে সব সময় সভাপতির সঙ্গে তাকে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যায়। সম্প্রতি তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় পরিচয়হীনতায় ভুগছেন জানিয়ে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি পারিবারিক কাজে কিংবা অন্য কোনো কাজ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হইনি। করোনার শুরুতেই মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষে জনগণের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আজ করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় পরিচয়হীনতায় ভুগছি। দ্রুততম সময়ে কমিটি দেওয়া হলে সমাজে একটা পরিচয় দিতে পারি। বিসিএস দিয়ে প্রার্থীরা যেমন বিভিন্ন ক্যাডারে চাকরি পায়, পরিচয় দিতে পারে। তেমনি আমরা রাজনীতি করি কিন্তু এখনো কোনো পরিচয় দিতে পারছি না।

সর্বশেষ খবর