মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

উজিরপুরের শাপলা বিল

রাহাত খান, সাতলা (উজিরপুর) থেকে ফিরে

উজিরপুরের শাপলা বিল

আবার প্রাণ ফিরেছে বরিশালের শাপলার বিলে। পর্যটকে মুখর বরিশালের প্রত্যন্ত শাপলার বিল। করোনার কারণে মৌসুমের শুরুর দিকে দর্শনার্থী কম হলেও এখন প্রচুর পর্যটক টানছে শাপলার বিল। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী বিস্তীর্ণ বিলের পানিতে ফুটে থাকা লাল, সাদা আর নীল শাপলা ফুল দেখতে যান। বিলের পানিতে নৌকায় বেড়িয়ে পর্যটকরা আনন্দ পায়। কিন্তু বিলে যাওয়ার রাস্তার বেহাল দশা আর সেখানে টয়লেটসহ থাকা-খাওয়ার তেমন ব্যবস্থা না থাকায় দর্শনার্থীরা বিপাকে। শাপলার বিলকে পর্যটনবান্ধব করার দাবি জানিয়েছেন তারা। এলাকাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে রাস্তাঘাটের সংস্কারসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান। বিভাগীয় সদর থেকে ৬৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে প্রত্যন্ত সাতলা বিল। বিভাগীয় সদর কিংবা উজিরপুর উপজেলা সদর থেকে সড়ক পথে সাতলা বাজারে যেতে সড়কের দুই পাশে চোখে পড়বে বিল আর বিল। হারতা বাজারের পর থেকে সাতলা যেতে দুদিকে বিলের কোমর সমান পানিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে শাপলা আর শাপলা ফুল। আষাঢ়ের শুরুতে প্রাকৃতিকভাবে বিলে ফুটে ওঠে হাজার হাজার শাপলা। শ্রাবণ থেকে ফুটতে শুরু করে লাল, সাদা আর নীল শাপলা ফুল। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় বিল।

করোনার কারণে এবার মৌসুমের শুরুতে দর্শনার্থী কিছুটা কম হলেও এখন প্রতিদিনই সেখানে ভিড় করছেন হাজারো পর্যটক। নৌকায় বিলের পানিতে বেড়িয়ে শাপলা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন তারা। অনেকে সেলফি তোলেন। কেউ আবার শাপলা তুলে নিয়ে যান। ছুটির দিনে জমজমাট হয়ে ওঠে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই শাপলার বিল। রাতে ফুটে থাকা শাপলা ফুল রোদ ওঠার পর ধীরে ধীরে বুজে যায়। এ কারণে শাপলা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগের আসল সময় সূর্য প্রখর হওয়ার আগ পর্যন্ত। শাপলার বিলের অপার সৌন্দর্য ঘিরে সাতলায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন দর্শনার্থীরা। তারা সেখানে যাওয়া-আসার সড়ক পথের বেহাল দশায় ক্ষুব্ধ। গত শুক্রবার ৩টি প্রাইভেট কার এবং একটি মাইক্রোবাস নিয়ে শাপলার বিল বেড়াতে যান বরিশাল নগরীর একদল ব্যবসায়ী ও কর্মজীবী। তাদের একজন হাফিজ উদ্দিন জানান, জেলা শহর থেকে এত কাছে এত সুন্দর শাপলার বিল আছে এখানে না এলে তা বোঝার উপায় নেই।

বেড়াতে যাওয়া তরুণী আফসানা ইসলাম জানান, করোনাকালে বাসার বাইরে যাওয়া হয় না। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে শাপলার বিল এসে মুগ্ধ তারা। এই পরিবেশটা শান্ত। এখানে এসে প্রশান্তি পেয়েছেন তারা সবাই। ব্যবসায়ী নূর হোসেন মিরন জানান, শাপলার বিলে মহিলাদের নিয়ে এসে তারা বিপদে পড়েছেন। সেখানে ওয়াশরুম, টয়লেট, বাথরুমসহ থাকা-খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিলে বেড়ানোর জন্য নেই পর্যাপ্ত নৌকার ব্যবস্থাও। বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, শাপলার বিলের সৌন্দর্য দেখার জন্য এই সময়ে অনেক পর্যটক সেখানে আসে। বরিশালের সাতলা-হারতার শাপলার বিল পর্যটনের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

শাপলার বিলকে আরও আকর্ষণীয় ও পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তুলতে পর্যটন করপোরেশনে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে ওয়াশরুম ও রেস্টরুম নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে। শাপলার বিলে যাওয়ার রাস্তা সংস্কারের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। শিগগিরই ওই সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর