মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মৃত ৭৮ শতাংশই পুরুষ

মৃত্যু ছাড়াল সাড়ে চার হাজার, নতুন শনাক্ত ২২০২

নিজস্ব প্রতিবেদক

মৃত ৭৮ শতাংশই পুরুষ

দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৩৭ জন। করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার ছয় মাসের মাথায় সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা সাড়ে চার হাজার ছাড়িয়ে গেল। এ পর্যন্ত মোট মারা গেছেন চার হাজার ৫১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ তিন হাজার ৫৩৪ জন (৭৮ দশমিক ২৬ শতাংশ) এবং নারী ৯৮২ জন (২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ)। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৪১২টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে আরও দুই হাজার ২০২ জনের। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ নিয়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে তিন লাখ ২৭ হাজার ৩৫৯ জনে দাঁড়াল। গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করা ৩৭ জনের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ ও সাতজন নারী। তাদের মধ্যে ৩১ জন হাসপাতালে এবং ছয়জন বাড়িতে মারা গেছেন। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে তাদের মধ্যে তিনজনের বয়স ২১-৩০ বছরের মধ্যে, দুজনের বয়স ৩১-৪০ বছরের মধ্যে, দুজনের বয়স ৪১-৫০ বছরের মধ্যে, নয়জনের বয়স ৫১-৬০ বছরের মধ্যে ও ষাটোর্ধ্ব রয়েছেন ২১ জন। ১৩ জন ঢাকা বিভাগের, ছয়জন চট্টগ্রাম বিভাগের, দুজন রাজশাহী বিভাগের, তিনজন খুলনা বিভাগের, সাতজন রংপুর বিভাগের, চারজন সিলেট বিভাগের এবং একজন করে মোট দুজন বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুবরণকারী চার হাজার ৫১৬ জনের মধ্যে পুরুষ তিন হাজার ৫৩৪ জন (৭৮ দশমিক ২৬ শতাংশ) এবং নারী ৯৮২ জন (২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ)। তাদের মধ্যে ২ হাজার ২৫৪ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এ ছাড়া ১ হাজার ২৩১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৫৯৩ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ২৭৪ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১০৮ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৩৭ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ১৯ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম।

এর মধ্যে ২ হাজার ১৮৪ জন ঢাকা বিভাগের, ৯৬৬ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ২৯৯ জন রাজশাহী বিভাগের, ৩৭৮ জন খুলনা বিভাগের, ১৭৫ জন বরিশাল বিভাগের, ২০৫ জন সিলেট বিভাগের, ২১২ জন রংপুর বিভাগের এবং ৯৭ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও তিন হাজার ২৯৮ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন দুই লাখ ২৪ হাজার ৫৭৩ জন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৭২৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৯৩টি ল্যাবে ১৫ হাজার ৪১২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৭২৪টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৬৮ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় বলে জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আর ১৮ মার্চ প্রথম একজনের মৃত্যুর সংবাদ জানানো হয়।

নিজেকে রক্ষায় তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে তরুণ-তরুণীরা : দেশের অর্ধেকেরও বেশি কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী কভিড-১৯ থেকে নিজেকে রক্ষায় যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন এবং এক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা কিছুটা এগিয়ে আছে। দেশের ৮টি বিভাগে ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৬৭৫ জন কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীর ওপর পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, কভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে তারা তিনটি বিষয়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া, মাস্ক পরিধান করা এবং হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা।

ইউএসএআইডি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘মিটিং দ্য আন্ডার নিউট্রেশন চ্যালেঞ্জ প্রকল্প’এর আওতায় গত মে মাসে ‘বাংলাদেশে কভিড-১৯-এর পরিপ্রেক্ষিতে তরুণদের পুষ্টিসচেতনতা, আচরণ এবং খাদ্য নিরাপত্তা’ বিষয়ে এই র‌্যাপিড সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। গতকাল জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের সহযোগিতায় প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এই সমীক্ষার ফলাফল জানানো হয়।

ফলাফল তুলে ধরে মিটিং দ্য আন্ডার নিউট্রেশন চ্যালেঞ্জ প্রকল্পের প্ল্যানিং অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন স্পেশালিস্ট প্রজ্ঞায়ন বেহেরা ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ভামি বোরা সাংবাদিকেদর জানান, কভিড-১৯-এর কারণে ৭২.৬ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে সেসব পরিবার, যাদের বার্ষিক আয় ১ লাখ টাকার কম। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের ৬৫.২ শতাংশ জানিয়েছে, স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে তারা ঘরে ও ঘরের বাইরে শরীরচর্চা করেছে। যার মধ্যে রয়েছে দৌড়, স্ট্রেচিং ও ইয়োগা। উত্তরদাতাদের ৪৫ শতাংশ নির্ধারিত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে এবং ৫৫ শতাংশ ঘুমিয়েছে ৭ ঘণ্টার কম, যা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম। ৫০ শতাংশের কাছাকাছি উত্তরদাতা লকডাউন-পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে কম খাবার খেয়েছে। ৭৩ শতাংশ জানিয়েছে তারা বাইরের খাবার খায়নি। ফলাফলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কভিড-১৯-এর কারণে ৩৬.৪ শতাংশ পরিবার মাঝারি কিংবা মারাত্মকভারে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছে।

পিআইবি মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদের সভাপতিত্বে ও পিআইবি সিনিয়র প্রশিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের পরিচালনায় ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন পিআইবি পরিচালক (প্রশাসন) মো. ইলিয়াস ভূঁইয়া ও এফএও’র মিটিং দ্য আন্ডার নিউট্রেশন চ্যালেঞ্জ প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার নাওকি মিনামিগওসি। বক্তব্য রাখেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিটের সহযোগী পরিচালক (গবেষণা) ফিরোজ আল মাহমুদ ও মিটিং দ্য আন্ডার নিউট্রেশন চ্যালেঞ্জ প্রকল্পের সিনিয়র নিউট্রেশন অ্যাডভাইজার ললিতা ভট্টাচার্য, হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ ও এগ্রিকালচার রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি আশরাফ আলী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর