বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

তিস্তায় বাড়ছে পানি, আবারও বন্যার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিস্তায় বাড়ছে পানি, আবারও বন্যার আশঙ্কা

টানা ৪৬ দিনের বন্যায় বিধ্বস্ত দেশের ৩৩ জেলা। এখনো ক্ষত সারিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি বানভাসি মানুষ। প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করে ২৯ আগস্ট বিপৎসীমার নিচে নামে দেশের সবকটি নদ-নদীর পানি। দুই সপ্তাহ না যেতেই প্রধান নদ-নদীর পানি ফের বাড়তে শুরু করেছে। বিপৎসীমার কাছে চলে এসেছে তিস্তার প্রবাহ। বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, সুরমা, ঘাঘট, করতোয়া, ইছামতি, মাথাভাঙা, পশর, কংসসহ অনেক শাখা নদীর পানি। এতে দেশে আবারও বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম গতকাল বলেন, ভারত গজলডোবা ব্যারাজের সবকটি গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তার পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাতের মধ্যে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। পানি বৃদ্ধির কারণে আবারও ভাঙন ও ফসলের ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছে তিস্তার ১৫২ কিলোমিটার অববাহিকার মানুষ। এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল সকালে জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানিসমতল স্টেশনের ৪৮টিতে পানি বেড়েছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনার পানিসমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। অপরিবর্তিত রয়েছে গঙ্গা, পদ্মার পানি। সুরমা ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানিসমতল হ্রাস পেলেও আজকের মধ্যে তা বাড়তে পারে। তবে গতকাল সকাল পর্যন্ত বিপৎসীমার নিচে ছিল সবকটি নদ-নদীর পানি। এদিকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জামালপুর, সিলেট, ছাতক, জারিয়াঞ্জাইলে ১১০ থেকে ১২৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, এক দিনে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতই অনেক শহর ও উপশহরকে তলিয়ে দিতে পারে। আমাদের লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, দীর্ঘ দুই মাস পর তিস্তায় আবারও বাড়ছে পানি। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের অনেক জায়গায় পানি ঢুকে গেছে। গত ৫ জুলাই সর্বশেষ তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। দুই মাস আগে বন্যার পানি নেমে গেলে ঘরে ফিরেছিল চরের মানুষ। প্রমত্তা তিস্তা শুকিয়ে হয়েছিল খাঁখাঁ। গত দুই দিন থেকে টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলের কারণে তিস্তা অববাহিকায় আবারও বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে দ্রুত পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে তিস্তার চরে বাস করা মানুষের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। তিস্তাবিধৌত সানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল গফুর জানান, গতকাল বিকাল থেকে পানি হু হু করে বাড়ছে, ফলে তার ইউনিয়নের ১২-১৪ হাজার মানুষের আবারও বন্যাকবলিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ভারত গজলডোবা ব্যারাজের সব গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তায় পানি বাড়ছে। সেজন্য তিস্তা অববাহিকার চরবেষ্টিত ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী গতকাল সকাল নাগাদ ২৪ ঘণ্টায় জারিয়াঞ্জাইল স্টেশনে কংস নদের পানি ১৮৩ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তবে এখনো নদটি বিপৎসীমার ২০২ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। একইভাবে বাড়লে দুই দিনের মধ্যেই বিপৎসীমা অতিক্রম করার কথা। এ ছাড়া মোংলায় পশর নদের পানি ৩৫, সুনামগঞ্জে সুরমার পানি ১১, পঞ্চগড়ে করতোয়ার পানি ৬৬ ও বগুড়ায় ৪০, পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের পানি জামালপুরে ৭৩ ও ময়মনসিংহে ৭৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।

সর্বশেষ খবর