বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ছয় মাসেও কমেনি করোনায় মৃত্যুহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছয় মাসেও কমেনি করোনায় মৃত্যুহার

দেশে প্রথম রোগী শনাক্তের ছয় মাসে চার হাজার ৫৫২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯। গত ৮ মার্চ প্রথম তিনজন বিদেশ ফেরত ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর সামাজিক সংক্রমণে বর্তমানে দেশে ৩ লাখ ২৯ হাজার ২৫১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় মারা গেছে ৩৬ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যু হার ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হার ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ১ আগস্ট করোনায় মৃত্যু হার ছিল ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। ১ জুলাই করোনায় মৃত্যু হার ছিল ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। দেশে ছয় মাসের মাথায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের গতি কিছুটা ধীর হয়েছে। তবে রোগী শনাক্তের হার এখনো অনেক বেশি। জনসংখ্যার অনুপাতে নমুনা পরীক্ষাও কম হচ্ছে। এতে প্রত্যন্ত গ্রামে ও শহরের কিছু অঞ্চলে সন্দেহভাজন অনেকে পরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। আবার সংক্রমণ ঠেকানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে প্রায় সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদদের আশঙ্কা, একটি দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে থাকে। জুনে তা তীব্র আকার ধারণ করে। জুলাইয়ের শুরু থেকে পরীক্ষা কমানোয় নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যাও কমতে থাকে। কিছুদিন ধরে শনাক্তের হারও কিছুটা কমেছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যেসব নির্দেশকের মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিনা বোঝা যায়, তার কোনোটিই দেশে দেখা যাচ্ছে না। নতুন রোগীর সংখ্যা, পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ও মৃত্যুর তথ্য বলছে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ থেকে বাংলাদেশ এখনো দূরে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হওয়ার পর সংক্রমণের হার ‘পিকে’ বা শীর্ষে পৌঁছতে আড়াই থেকে তিন মাস সময় লাগতে দেখা গেছে। বাংলাদেশে শুরুতে বলা হয়েছিল এপ্রিলে সংক্রমণের পিক দেখা যাবে, পরে বলা হয় সেটি হবে মে মাসে। কিন্তু জুন এবং জুলাই মাসেও সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এরপর কখন বাংলাদেশ সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী শীর্ষ অবস্থানে অর্থাৎ পিকে উঠেছে, সে বিষয়ে কোনো সরকারি ঘোষণা দেখা যায়নি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকার দাবি করছে বাংলাদেশে সংক্রমণের হার এখন নিম্নগামী। কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘জুলাইয়ের মাঝামাঝি সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি ছিল, এরপর সেটা ক্রমে একটু একটু করে কমে। কেউ কেউ বলেন এখন হার নিম্নমুখী, আমি এখনো নিম্নমুখী বলব না। কিন্তু বলা যায় সেটা এখন একটি ‘ফ্ল্যাট কার্ভে’ রয়েছে।’ শুরুতে বাংলাদেশে নমুনা পরীক্ষার হার খুবই অল্প ছিল। প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষের নমুনা টেস্টের অবস্থায় যেতে সময় লাগে দুই মাসের বেশি। কিন্তু জুন মাস নাগাদ পরীক্ষার সংখ্যা ১৮ হাজারের বেশি উত্তীর্ণ হয়। এরপর ক্রমে সে সংখ্যা কমতে থাকে। কিন্তু আগস্ট মাস নাগাদ সরকারি হিসাবেই দেখা যায়, নমুনা পরীক্ষার হার জুনের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ কমে গেছে। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, নমুনা পরীক্ষা করাতে সরকারের নির্ধারিত ফি এবং মানুষের মধ্যে কভিড-১৯ নিয়ে উদ্বেগ কমে যাওয়ার কারণে পরীক্ষার হার কমছে।

চার মাসে সর্বনিম্ন শনাক্তের হার, বাড়ল নারীর মৃত্যু : দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৯৭৩টি নমুনা পরীক্ষায় ১ হাজার ৮৯২ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা গত চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ৯ মে এর চেয়ে কম শনাক্তের হারের তথ্য জানানো হয়। ওই দিন শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় নারীর মৃত্যু দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এখন পর্যন্ত দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে মোট ৩ লাখ ২৯ হাজার ২৫১ জনের দেহে। ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৩৬ জন। সব মিলে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৪ হাজার ৫৫২ জন। গত এক দিনে মৃত ৩৬ জনের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ ও ১৭ জন নারী। ২৪ ঘণ্টায় নারীর মৃত্যুহার ৪৭ শতাংশের বেশি, যা এখন পর্যন্ত নারীর মৃত্যুহারের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু বিবেচনায় নারীর মৃত্যুহার ২১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ২৩৬ জন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ২৭ হাজার ৮০৯ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৬৯ দশমিক ১৯ আর মৃতের হার ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গতকাল দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

সর্বশেষ খবর