বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

স্বরূপকাঠির পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

পিরোজপুর প্রতিনিধি

স্বরূপকাঠি পৌরসভার মেয়র গোলাম কবিরের বিরুদ্ধে বিশিষ্ট নাগরিকরা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেছেন। এক চিঠিতে তারা দুদক ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কাছে মেয়রের স্বেচ্ছাচার, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির বিশদ বিবরণ দিয়ে এগুলোর প্রতিকার চেয়েছেন। চিঠিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে আছেন- অ্যাডভোকেট কমল কৃষ্ণ আচার্য, কাজী ছাইফুদ্দিন শাহারিয়ার সোহাগ, শামীম হাসান, হুমায়ুন কবির, খলিলুর রহমান, হাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান, শ্যামল দত্ত প্রমুখ।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি পৌরসভা ‘ক’ শ্রেণির। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর এ পৌরসভায় ৩২টি ঠিকাদারি লাইসেন্স ছিল। বর্তমান মেয়রের দুর্নীতির কারণে লাইসেন্স সংখ্যা এখন মাত্র ৭টি। তিনি পৌরসভার প্রায় ৯৫% কাজ মাহাবুব ট্রেডার্সের নামে নিয়ে নিজেই কাজ করে থাকেন। টেন্ডার আহ্বান করলে প্রতি গ্রুপে ৩ বা ৪টি লাইসেন্সে কাজ ক্রয় দেখানো হয়। উন্নয়নমূলক কাজের বরাদ্দের টাকা অন্য ঠিকাদারদের নামমাত্র দিয়ে মাহাবুব ট্রেডার্সের নামে সিংহভাগ টাকা মেয়র নিজে নিয়ে নেন। নগর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ যদিও ইজিপি পদ্ধতিতে হয় তবু তিনি উপ-সহকারী প্রকৌশলীর যোগসাজশে পত্রিকার গোপনীয়তা রক্ষা করে পৌরসভার রেজ্যুলেশন ছাড়া টেন্ডার করিয়ে নিজের পছন্দের ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে তার আপন ভাইয়ের ফার্ম হোসেন অ্যান্ড ব্রাদার্স ছাড়া মাহাবুব ট্রেডার্স, তিষা এন্টারপ্রাইজ, সঞ্জয় কনস্ট্রাকশনের নামে নিয়ে নেন। প্রতিটি কাজে তিনি অর্ধেক শরিকে থাকেন। যেসব রাস্তা মাত্র ২/৩ বছর আগে করা হয়েছে তিনি সেসব রাস্তা পুনঃ টেন্ডার করে নামমাত্র কাজ করিয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন। কাজগুলো অতি নিম্নমানের কারণে ইতিপূর্বে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনতার রোষানলেও পড়েন মেয়র, যার খবর বিভিন্ন সময় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। মেয়রের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে স্বরূপকাঠিতে মানববন্ধনও হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, মেয়রের সীমাহীন দুর্নীতি এবং বিপুল অর্থ আত্মসাতের কারণে পৌরবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছে। মেয়রের বড় ভাই গোলাম ফারুকের ঠিকাদারি ফার্ম হোসেন অ্যান্ড ব্রাদার্সকে দেওয়া হয় গনমান খালের পাড়ের একটি সড়ক মেরামতের কাজ। ৪/৫ বছর আগে কার্পেটিং করা ওই সড়কটিতে মাত্র ৫/৭ লাখ টাকার গুঁড়া পাথরের সিলকোট কাজ করলেই সড়কটি দীর্ঘ মেয়াদি হতো। অথচ ওই সড়কটিতে নতুন প্রকল্প বরাদ্দ করা ৫৮ লাখ টাকার কাজেও একইভাবে লুটপাট করা হয়। এর আগে ২০১৮ সালে গনমান খালের উত্তর পাড়ের একটি সড়ক মেরামত কাজ করানো হয় ৯৬ লাখ টাকায় সঞ্জয় কনস্ট্রাকশনের মাধ্যমে। সেখানে মাত্র ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। অভিযোগকারীরা তাদের চিঠিতে দাবি করেন : মেয়র তার নির্বাচনী হলফনামায় যে সম্পদের বিবরণ তুলে ধরেছেন এর সঙ্গে তার বর্তমান সম্পদের বিবরণ অনুসন্ধান করলেই প্রশ্ন উঠবে, কোন চেরাগের জাদুতে তিনি ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, জমি, নিজ এলাকায় জমি, জাহাজ ক্রয় এবং ব্যাংক ব্যালেন্স ইত্যাদি করেছেন। তাকে আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারী বলে অভিহিত করা হয়েছে। মেয়র কবির একদা সর্বহারা নেতা সিরাজ সিকদারকে হত্যার দায়ে তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত নেতা আবদুর রাজ্জাক ও এসপি মাহাবুব উদ্দিন এবং বঙ্গবন্ধুর মরণোত্তর বিচার চেয়ে মামলাকারী লিবারেল পার্টির প্রধান মহিউদ্দিনের স্বরূপকাঠি উপজেলার প্রতিনিধি ছিলেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে মেয়র গোলাম কবির বলেন, সামনে নির্বাচন। এজন্যই এসব অভিযোগ। মেয়রের কোনো আপনজন তার পৌরসভায় ঠিকাদারি করাটা বেআইনি এটা আমার জানা ছিল না। তিনি লিবারেল পার্টির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি সারা জীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি। তবে লিবারেল পার্টির একটি মিটিংয়ে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিয়েছিলাম।

সর্বশেষ খবর