শিরোনাম
শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৬১

অস্ট্রেলিয়াগামী অ্যামফিটামিনের ট্রানজিট ছিল বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে ৬১ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। অভিযানে ১ হাজার ৮৪৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২৮৬ গ্রাম ১২২ পুরিয়া হেরোইন, ৫ কেজি ৪৭০ গ্রাম ২০ পুরিয়া গাঁজা, ২০ বোতল ফেনসিডিল ও ৩২টি নেশা জাতীয় ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। গত বুধবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত চলা এ অভিযানে বিভিন্ন থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ অংশ নেয়। গ্রেফতার- কৃতদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে ৪২টি মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির সিনিয়র এসি (মিডিয়া) মফিজুর রহমান পলাশ।

অস্ট্রেলিয়াগামী অ্যামফিটামিনের ট্রানজিট ছিল বাংলাদেশ : হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জব্দকৃত অস্ট্রেলিয়াগামী নতুন মাদক অ্যামফিটামিন পাচারে শুধু ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বাংলাদেশকে। ইউরোপের দেশগুলোতে এ মাদকের ব্যাপক চাহিদা থাকায় আন্তর্জাতিক মাদক চোরাকারবারিরা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সাড়ে ২৪ কোটি টাকা মূল্যের চালানটি পাঠানোর চেষ্টা করছিল। এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে মামলা করা হবে। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ আহসানুল জব্বার। গতকাল দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিএনসি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ডিএনসি ডিজি বলেন, তৈরি পোশাক (জিন্স প্যান্ট) রপ্তানির আড়ালে ৭টি কার্টনে ছোট-বড় ২৮টি কার্বনের লেয়ার দিয়ে তৈরি পাতলা এলুমিনিয়াম প্যাকেটে পাচারের সময় বিমানবন্দরে সমন্বিত অভিযানে ধরা পড়ে অ্যামফিটামিনের চালানটি। এরপরই জড়িতদের ধরতে অভিযানে নামে ডিএনসির একাধিক টিম। ইতিমধ্যে সন্দেহভাজন হিসেবে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন- আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সংস্থা বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লিমিটেডের (ফেডেক্স) নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) খন্দকার ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ, সহকারী উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) রাসেল মাহমুদ, ইউনাইটেড এক্সপ্রেসের জেনারেল ম্যানেজার গাজী শামসুল আলম, এক্সপোর্ট কার্গোর ভিতরে এমজিএইচ গ্রুপের লোডিং সুপারভাইজার কাজল থুটোকিশ গোমেজ, কার্গো হেলপার/লোডার মো. হামিদুল ইসলাম ও মো. নজরুল ইসলাম। ডিএনসি প্রধান বলেন, ৩৪০ কার্টন পণ্যের আড়ালে ওই ৭টি কার্টন পাচার করা হচ্ছিল। কার্টনগুলোর সংযুক্ত রপ্তানি দলিলাদি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফেডেক্সের মাস্টারওয়ে বিলে শিপারের নাম নেপচুন ফ্রেইট লি.। যার ঠিকানা কেরানীগঞ্জের ১৪ নম্বর রোডের ৫০১ নম্বর বাড়ি। ফেডেক্সে পণ্যগুলো বুকিং দিয়েছে তাদেরই লোকাল এজেন্ট ইউনাইটেড এক্সপ্রেস। আর এসব পণ্য রপ্তানিতে কাস্টমসের জন্য ম্যানুয়ালি বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করেছে রপ্তানিকারকের পক্ষে মেসার্স ডিনামিক ট্রেডার্স। অভিযানের সময় দেখা যায়, প্রধান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নেপচুন ফ্রেইটের ঠিকানা ভুয়া। তবে, আশকোনায় তাদের অফিসের ঠিকানা পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ওই অফিসের রুবেল হোসেন নামে এক ব্যক্তি ওই সাত কার্টনে তৈরি পোশাক-জিন্সের প্যান্ট অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর জন্য ইউনাইটেড এক্সপ্রেস লিমিটেডে বুকিং দিয়ে যায়। রাসেলকে গ্রেফতার করা গেলে মূল হোতা সম্পর্কে জানা যাবে। ডিএনসির পরিচালক (অপারেশনস) ড. এ এফ এম মাসুম রব্বানী বলেন, বাংলাদেশ মাদক উৎপাদন করে না। কিন্তু মিয়ানমার, ভারত ও চীনে বৈধভাবে অ্যামফিটামিন তৈরি হয়ে থাকে। ফলে চোরাকারবারিরা হয়তো ওই দেশগুলোর কোনোটি থেকে এগুলো এনে হংকং হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাচার করতে যাচ্ছিল। এর সঙ্গে যে-ই জড়িত থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ডিএনসির সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, শাহজালাল থেকে ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম অ্যামফিটামিন উদ্ধার করা হয়। এগুলো এখনো আমাদের দেশে জনপ্রিয়তা না পাওয়ায় মাদক কারবারিরা ইউরোপে পাচার করে থাকতে পারে। এগুলোর আনুমানিক দাম ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। জব্দকৃত অ্যামফিটামিন দিয়ে ১৩ লাখ ৩২ হাজার ট্যাবলেট তৈরি করা যেত।

সর্বশেষ খবর