শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় অভিভাবক হারাচ্ছে পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনায় অভিভাবক হারাচ্ছে পরিবার

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মরণকামড়ে অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ছে পরিবারগুলো। ভাইরাসটির সংক্রমণে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ষাটোর্ধ্ব মানুষের। এর পরপরই সর্বাধিক মৃতের তালিকায় আছে ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের। করোনার ছোবলে পরিবারগুলো থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মাথার ওপর ছায়া হয়ে থাকা বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানী, চাচা-চাচি, ফুফু-ফুফা।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে আরও ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জনই ষাটোর্ধ্ব। ১৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, একজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর ও একজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এই সময়ে ৩০ বছরের কম বয়সী কেউ মারা যায়নি। ৩৪ জনকে নিয়ে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে চার হাজার ৬৬৮ জনের। এর মধ্যে দুই হাজার ৩৩৫ জনেরই (৫০ দশমিক ০২ শতাংশ) বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এক হাজার ২৭৪ জনের (২৭ দশমিক ২৯ শতাংশ) বয়স ছিল ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। ৬১০ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, ২৮০ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর, ১০৯ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছর, ৪০ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছর ও ২০ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের মধ্যে।

এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিশু ও বৃদ্ধদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তবে করোনাভাইরাস  শিশুদের ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে না। কিন্তু, বয়স্ক মানুষগুলো করোনাকে প্রতিহত করতে পারছে না। এমনিতেই বয়স্করা নানারকম শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। এর ওপরে করোনাভাইরাস আক্রমণ করলে তাদের মৃত্যুঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়। তরুণরা ভাইরাসটি দ্বারা আক্রান্ত হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেরে উঠছেন। অনেক সময় তাদের উপসর্গও প্রকাশ পাচ্ছে না। তবে তাদের মাধ্যমে পরিবারের বয়স্ক মানুষটি আক্রান্ত হলে তাদের সেরে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ছে। এ জন্য পরিবারের সব সদস্যের স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৭৪৭টি নমুনা পরীক্ষায় আরও এক হাজার ৭৯২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৩৪ হাজার ৭৬২ জনে। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৩৪ জন। সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৪৭৪ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন দুই লাখ ৩৬ হাজার ২৪ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৭০ দশমিক ৫১ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩৪ জনের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ ও নয়জন নারী। সবার মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। মৃতদের মধ্যে ১৯ জন ঢাকা, পাঁচজন চট্টগ্রাম, তিনজন খুলনা, তিনজন রংপুর, দুজন বরিশাল, একজন রাজশাহী ও একজন সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। ২৪ ঘণ্টায় আট হাজার ৯৮২টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ঢাকার ভিতরে। বাকি পাঁচ হাজার ৭৬৫টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ঢাকার বাইরে সারা দেশে। সুস্থ ও মৃত বাদ দিলে দেশে বর্তমানে শনাক্ত হওয়া সক্রিয় করোনা রোগী আছেন ৯৪ হাজার ৭০ জন। এর মধ্যে আইসিইউসহ হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিন হাজার ৫৭৯ জন। বাকি ৯০ হাজার ৪৯১ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন বাড়িতে থেকে। অর্থাৎ, মাত্র ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ রোগী ভর্তি আছেন হাসপাতালে। বাকি ৯৬ দশমিক ২০ শতাংশ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বাড়িতে থেকে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর