রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ফের নদী ভাঙনে দিশাহারা মানুষ

বন্যার প্রভাব পড়তে পারে শীতকালীন সবজি বাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফের নদী ভাঙনে দিশাহারা মানুষ

সিরাজগঞ্জের চৌহালীর বাঘুটিয়া এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বন্যার পানি নেমে গেলেও স্বস্তি ফেরেনি বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে। নদ-নদীর পানি দুই-এক দিন কমছে, তো ফের বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানির এই হ্রাস-বৃদ্ধিতে সিরাজগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, রংপুর, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, আবাদি জমি। মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া তিন নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় এক দিনে বিলীন হয়ে গেছে নানা স্থাপনাসহ ১০ একর জমি। দেড় মাস টানা বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ফের তিস্তা, ধরলাসহ কয়েকটি নদীর পানি বৃদ্ধিতে প্লাবিত হয়েছে চরাঞ্চল। ডুবে গেছে বন্যার পর নতুন করে লাগানো আমন ও শাকসবজির খেত। অনেক এলাকায় কৃষক বন্যা আতঙ্কে এখনো শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু করেনি। এতে আগামী শীতে সবজির বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গতকাল সকালের তথ্যমতে, বর্তমানে সবগুলো নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানিসমতল স্টেশনের ৪৪টিতে পানি বেড়েছে, ৫৩টিতে কমেছে, অপরিবর্তিত রয়েছে চারটি স্টেশনের পানি। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার সুরমা-কুশিয়ারার নদীসমূহের পানিসমতল আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থিতিশীল রয়েছে গঙ্গা-পদ্মার পানি। ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি কয়েক দিন বৃদ্ধির পর গত দুই দিন থেকে হ্রাস পাচ্ছে। পানির এই হ্রাস-বৃদ্ধিতে নদী-তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ার তিন নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় গত শুক্রবার রাত থেকে ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে। পদ্মার ভাঙনে এক দিনে ঘাট এলাকার নানা স্থাপনাসহ ১০ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের তীব্রতা এত বেশি যে, ঘাট এলাকার স্থাপনা এবং আশপাশের বাড়িঘর সরিয়ে নিতেও পারছেন না স্থানীয়রা। এদিকে আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, যমুনার পানি একবার বাড়ছে, আবার কমছে। এতে ভাঙন ও বন্যা আতঙ্কে ভুগছে সিরাজগঞ্জের যমুনা পাড়ের মানুষ। টানা আড়াই মাস দুর্ভোগের পর ঘরে ফিরেও স্বস্তি মিলছে না তাদের। বন্যায় ফসল হারিয়ে নতুন ফসল লাগানোর প্রস্তুতি নিলেও পানি বাড়ায় পিছপা হতে হচ্ছে। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন করে শীতকালীন শাকসবজি লাগানো শুরু করেছেন অনেক কৃষক। সবজির খেতগুলো সবুজ হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেই সবজি শেষ পর্যন্ত ঘরে তুলতে পারবে কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে অধিকাংশ কৃষক। বন্যায় সবজি নষ্ট হওয়ায় এরই মধ্যে বাজারে সবজির দাম চড়া। নতুন সবজি বন্যায় পড়লে আসছে শীতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। অন্যদিকে পানির হ্রাস-বৃদ্ধিতে আবারও যমুনার অরক্ষিত তীরে ভাঙন শুরু হয়েছে। চৌহালী উপজেলার খাসপুকুরিয়া ইউপির মোকারভাঙ্গা, রেহাইপুকুরিয়া, দেওয়ানগঞ্জ বাজার, বাঘুটিয়া ইউপির চর সলিমাবাদ, চর বিনানুর, মেটুয়ানী এবং শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ও কৈজুরীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।  চৌহালী এলাকার বাসিন্দা আবদুল লতিফ জানান, প্রতিবছর শত শত হেক্টর ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ বছরও ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চৌহালী উপজেলা মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। এদিকে ভাঙনকবলিতরা সরকারি ত্রাণ সহায়তার পরিবর্তে বাপ-দাদার চিরচেনা বসতভিটা রক্ষায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন। কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, পানি নেমে যাওয়ায় চরাঞ্চলের শত শত কৃষক শীতকালীন সবজি পালংশাক, লালশাক, মুলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ শুরু করেছে। অনেকেই রোয়াধানের চারা রোপণ করছে। কিন্তু যমুনার পানি বারবার বাড়ায় কৃষক শঙ্কিত। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে পানি বাড়ছে। তবে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে না। বর্তমানে পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুই-এক দিনের মধ্যে পানি কমে যাবে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা ও ধরলার পানি আবারও বেড়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তা-ধরলার ৬৩ চরে আবারও বন্যা আতঙ্কে পড়েছেন অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। ইতিমধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার তিস্তাপাড়ের বিভিন্ন চরের ২০ হাজারের বেশি মানুষ। তলিয়ে গেছে আমনসহ শাকসবজির খেত। তীব্র ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, ফসলি জমি, ঈদগাহ, কবরস্থান, স্কুল, ব্রিজ, রাস্তা। এরই মধ্যে লালমনিরহাট ও রংপুরের সীমানায় তিস্তাপাড়ের শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এসকেএস বাজারের কাছে পূর্ব ইচলী ঈদগাহ মাঠ, জয়রামওঝা ঈদগাহ মাঠ ও কবরস্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। চর ইচলী এলাকার মোনাজাত উদ্দিন আনন্দলোক বিদ্যালয়টি যে কোনো সময় নদীতে হারিয়ে যেতে পারে। স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে বালুর বস্তা ও গাছপালার ডাল ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে ভাঙনের ভয়ে বাড়িঘরের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর