রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বীরাঙ্গনাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হচ্ছে

পাবেন মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সব রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা

আনিস রহমান

নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপনের জন্য সারা দেশে শুরু হয়েছে বীরাঙ্গনা ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে সরাসরি কিংবা অন্য কোনো পন্থায় দেশ মাতৃকার জন্য যারা আত্মত্যাগ বা আত্ম নিয়োগ করেছেন তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা হবে। মুক্তিযোদ্ধারা যেসব রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন ঠিক সেসব সুযোগ-সুবিধার আওতায় আসবেন নতুন এই তালিকাভুক্তরা। এবার মূলত বীরাঙ্গনা আর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা করার কাজে হাত দিয়েছে সরকার। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ইতিমধ্যেই তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে কেউ প্রকাশ্যে বীরাঙ্গনার কথা বলতে চান না। তবে এখন কেউ কেউ আবেদন করছেন। আমরা সেই আবেদন গ্রহণ করে তিনজন সিনিয়র নারী উপজেলা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিচ্ছি। তারা ওই নারীর স্পর্শকাতর বক্তব্য রেকর্ড করেন এবং পরে তা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে সত্যতা যাচাই-বাছাই করে তাদের মতামত মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছেন। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ৫ শতাধিক নারীকে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

এ ছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবীর একটি সংজ্ঞা নির্ধারণের কাজ চলছে। দেশে প্রায় এক দেড়শ শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম আমরা পাই। যারা স্বীকৃত তবে সীমিত। কিন্তু বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের এমন শহীদ বুদ্ধিজীবী থাকতে পারেন। আমরা আবেদন গ্রহণ করছি। উপজেলা ভিত্তিক আবেদন গ্রহণ করে তা কীভাবে বাছাই করা হবে তা নির্ণয় করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, কোনো কোনো বুদ্ধিজীবীকে অপহরণ করে প্রাণে মেরে ফেলা হয়েছে কিন্তু রাষ্ট্রের কাছে এর কোনো রেকর্ড নেই। আবার অনেক বীরাঙ্গনা রয়েছেন যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিংবা তাদের দোসন রাজাকার, আলবদর, আল-শামস এমন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দ্বারা অকথ্য নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তাদের কোনো তথ্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সংস্থা বা সরকারের হাতে গচ্ছিত নেই। এবার তাদের সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনাদের পূর্ণাঙ্গ একটি তালিকা করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে সারা দেশে  গেজেটভুক্ত ৩৩৯ জন বীরাঙ্গনা রয়েছেন। যাদের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতো একই ধরনের সুযোগ-সুবিধাও পেয়ে থাকেন। তবে ধারণা করা হয় এর প্রকৃত সংখ্যা হবে ২ থেকে ৫ লাখ। সেজন্যই একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর শহীদ বুদ্ধিজীবীর ক্ষেত্রে তো কোনো তালিকাই নেই। শুধু মোটাদাগে যাদের নাম আসে তাদের পরিবারকেও মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে। এ জন্য প্রথমবারের মতো শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তথ্য সংগ্রহের প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছে। এ জন্য সারা দেশে বিভিন্ন নারী সংগঠক, গবেষক ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন, সংশ্লিষ্ট সংস্থার মতামত নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে সারা দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কাজও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সারা দেশে যে ভয়ংকর গণহত্যা, ধর্ষণ, ধ্বংসযজ্ঞ, দেশত্যাগ, গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে আর লাখ লাখ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেসবের ওপর নানা ধরনের গবেষণাও হয়েছে। এ নিয়ে দেশি-বিদেশি গবেষকরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে প্রবন্ধও প্রকাশ করেছেন। বীরাঙ্গনা ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে এসব দলিলের তথ্যও কাজে লাগানো হবে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের দলিল ও ইতিহাসগুলো বিশ্লেষণ করে তথ্য সংযোজন করা হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর  রহমানের ভাষণ অনুযায়ী মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন ৩০ লাখ বাঙালি আর সম্ভ্রম হারিয়েছেন ৭ লাখ মা-বোন।

সর্বশেষ খবর