রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে যানজট নিরসনে আসছে বড় সফলতা

বেড়েছে সিডিএর কয়েকটি প্রকল্পের মেয়াদ, বাড়ছে গতি, চট্টগ্রামে প্রথম বাইপাস হচ্ছে বায়েজিদ বোস্তামী থেকে ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও চট্টগ্রামের উন্নয়নে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামবাসী দীর্ঘদিন ধরেই উন্নয়নের পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসন, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা ধরনের আশার আলো দেখে আসছেন। সেই আশার আলো বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই চট্টগ্রামের উন্নয়ন মনিটরিং করছেন। সেই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সংস্থা প্রকল্প ছাড়াও নানাভাবে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চলমান তিনটি বড় প্রকল্পের মেয়াদও বাড়িয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। নানা কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় মন্ত্রণালয় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় বাড়িয়েছে। ফলে কাজের গতিও বাড়ছে দ্রুত। তবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম নগরীর যানজট দ্রুত নিরসনে বড় ধরনের সফলতা আসবে বলে জানান                 সংশ্লিষ্টরা। সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির বেশ কয়েকটি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আবারও মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প, পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোড প্রকল্প, ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। এগুলোর মধ্যে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ প্রায় ৩৫ শতাংশ হলেও অন্য দুটি প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর সিডিএর চলমান উন্নয়ন কাজগুলো আরও গতিশীল ও দৃশ্যমান করতে কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করার পর প্রকল্পগুলোর বাকি কাজ দ্রুত করা হচ্ছে। মেয়াদ বৃদ্ধি করা তিনটি প্রকল্পের মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের প্রায় ৩৫ শতাংশ (আর্থিক অগ্রগতি) কাজ শেষ হয়েছে। পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোড প্রকল্পের ৯০ শতাংশ এবং ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পেরও প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।’ তবে সিডিএর অন্য চলমান প্রকল্পগুলোও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাস্তবায়ন শেষে নগরীর যানজট নিরসনে বড় ধরনের সফলতাও আসবে বলে জানান তিনি।

খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন : একনেকে শর্ত সাপেক্ষে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট এই ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ‘নানা জটিলতায়’ প্রকল্পটি বেশ কিছুদিন থমকে থাকার পর সিডিএর নেওয়া এই মেগা প্রকল্পটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএর সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। একই বছরের ২৮ এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে। সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, ‘জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। ৩৬টি খালের মাটি অপসারণে ২৮ কোটি ৮৫ লাখ ও খননে ২৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ৬ হাজার ৫১৬ কাঠা ভূমি অধিগ্রহণে ১ হাজার ৭২৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, নতুন ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে ৩১৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ১৭৬ কিলোমিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য ২ হাজার ৬৪০ কোটি, ৪৮টি পিসি গার্ডার ব্রিজ প্রতিস্থাপনে ব্যয় করা হয়েছে ২৯৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। বন্যার পানি সংরক্ষণে ৩টি জলাধার, ৬টি আরসিসি কালভার্ট প্রতিস্থাপন, ৫টি টাইডাল রেগুলেটর, ৪২টি সিল্টট্রেপ স্থাপন, ২০০টি ক্রস ড্রেন কালভার্ট নির্মাণের কথা রয়েছে। ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রোড সাইড ড্রেনের সম্প্রসারণ, ২ হাজার বৈদ্যুতিক পুল স্থানান্তর, ৮৮০টি স্ট্রিট লাইট স্থাপন এবং ৯২টি ইউটিলিটি লাইন স্থানান্তরের কথা রয়েছে।

সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প : এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের বহিঃসীমানা দিয়ে লুপরোড নির্মাণসহ ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর একনেকে পাস হয়। প্রশাসনিক অনুমোদন হয় ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। প্রকল্পটি প্রথম নেওয়া হয় ১৯৯৭ সালে। তখনকার ৩৩ কোটি টাকার প্রকল্পটি এখন ৩২০ কোটি ৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের ঠিকাদারি সংস্থা স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং। প্রকল্পটির বর্তমান মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হলেও আবারও এক বছরের জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের প্রথম বাইপাস রোড হিসেবে বায়েজিদ বোস্তামী থেকে ঢাকা ট্রাঙ্ক রোডের সংযোগ স্থাপন হবে।

আউটার রিং রোড প্রকল্প : জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ২০০৫ সাল থেকে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ-কাম-আউটার রিং রোড নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে। যাচাই শেষে ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে জাইকা। শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৮৬৫ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। দুবার সংশোধনের পর বর্তমানে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের ১ হাজার ৭২০ কোটি ১১ লাখ ৮০ হাজার ও জাইকার সহায়তা ৭০৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি জুন মাসে শেষ হলেও আবারও এক বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর