মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বাহারি গাছগাছালির জীবন্ত জাদুঘর

মোস্তফা কাজল

বাহারি গাছগাছালির জীবন্ত জাদুঘর

সবুজ প্রকৃতির বাহারি গাছ-গাছালিতে ভরপুর মেগা সিটি ঢাকার জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান। এখানে হাঁটতে গিয়ে চারপাশে চোখে পড়বে বিভিন্ন প্রকৃতির গাছ। উঁচু টিলা আর নিচু জলাশয়ের পাশ দিয়ে হেঁটে  যেতে ভালোই লাগবে সবার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে দেশের সবচেয়ে বড় এ উদ্ভিদ উদ্যান। এখানকার প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য সবাইকে বিমোহিত করে। অনেকেই নগরজীবনের কোলাহল ভুলে একটু নির্জনতার স্বাদ নিতে এবং নিজেকে প্রকৃতির মধ্যে বিলিয়ে দিতে এই উদ্যানে আসেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এ উদ্যানে ঢোকা যায়। উদ্ভিদ উদ্যানের প্রায় পাঁচ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে নার্সারি। এ নার্সারিতে ফুল, ফল, লতা ও গুল্ম উদ্ভিদের চারা চাষ করা হয়। সরকার নির্ধারিত মূল্যে এই নার্সারি থেকে চারা কেনা যায়। ১৯৬১ সালে মিরপুরে এ উদ্যানের যাত্রা শুরু। এটি স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য- বিভিন্ন জাতের উদ্ভিদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও জিনপুল তৈরি। এ উদ্যানে রয়েছে গোলাপ বাগান, পাইন বাগান, ফলগাছের বাগান, বাঁশবাগান, পামগাছের বাগান, মৌসুমি বাগান, ঔষধি গাছের বাগান, পদ্মপুকুর, শাপলা পুকুর, ক্যাকটাস হাউস, অর্কিড হাউস এবং ইনডোর গাছের জন্য রয়েছে নেট হাউস। ছোট-বড় জলাশয় আছে সাতটি, মোট আয়তন প্রায় ১১ একর। প্রতিবছর সাধারণ উদ্ভিদপ্রেমীসহ শিক্ষা ও গবেষণার কাজে এ উদ্যান পরিদর্শনে আসেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। চলতি বছর একটু ব্যতিক্রম। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে ১৮ মার্চ থেকে এ উদ্যানে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

সহকারী বন সংরক্ষক সোহরাব হোসেন বলেন, বর্তমানে এ উদ্ভিদ উদ্যানে ১১৭ পরিবারভুক্ত ৯৫২ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে ২৫৬টি প্রজাতির ৩৫ হাজার বৃক্ষ, ৩১০ প্রজাতির ১০ হাজার গুল্ম ও ৩৭৮ প্রজাতির ১২ হাজার বিরল ও লতা জাতীয় উদ্ভিদ। রাজধানীর সবচেয়ে বড় ও দৃষ্টিনন্দন স্থান হিসেবে পরিচিত এ উদ্যানে আছে  লেক, ঘূর্ণায়মান হাঁটার পথ। উদ্ভিদগুলো শনাক্ত করার সুবিধার্থে প্রতিটি উদ্ভিদের গায়ে নামফলক দেওয়া আছে। বিশাল আয়তনের এ উদ্যান ঘুরে দেখতে অনেক সময় লাগতে পারে। তাই ইচ্ছা করলে কিছু খাবারও সঙ্গে নিতে পারেন। জীবন্ত এ উদ্ভিদ সংগ্রহশালায় রয়েছে বিরল প্রজাতির অ্যাভেনিয়াম, বচ ইপিসিয়া, অ্যাক্সিফানসহ অস্ট্রেলিয়ার সিলভার ওক জ্যাকারান্ডা ও ট্যাবে বুইয়া। প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়ে আফ্রিকার বাওবাব গাছ। এর একটু পাশেই নানা জাতের গোলাপ বাগান। প্রধান পথ ধরে একটু সামনে গেলেই দেখা যাবে অস্ট্রেলিয়ার সিলভার ওক, জ্যাকারান্ডা ও ট্যাবে বুইয়া, জাপানের কর্পূর, মালয়েশিয়ার ওয়েল পাম ও থাইল্যান্ডের রামবুতাম। রাস্তার দুই পাশে রয়েছে দেবদারু ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা বিভিন্ন প্রজাতির ইউক্যালিপটাসের সমারোহ। চৌরাস্তা থেকে উত্তরের রাস্তাটি ধরে গেলে দেখা যাবে কর্পূর, ম্যাগনোলিয়া, শ্বেতচন্দন, গ্লিরিসিডিয়া, ফার্ন কড়ই, তুন, কেশিয়া নড়ুসা, ট্যাবে বুইয়া ও চেরি গাছ। এখানে আছে ক্যাকটাসের বিশাল সংগ্রহ। ওল্ডম্যান, ফিসহুক ক্যাকটাস, ম্যামিলারিয়া, ক্ষেপালিয়া, মেলো ক্যাকটাস, গোল্ডেন ব্যারেল, সিরিয়াম  হেক্সোজেনাস, টেইল, অ্যাপাংসিয়া সিডাম, হাওয়ার্থিয়া, পিকটোরিয়া রাখা হয়েছে স্বচ্ছ কাঁচঘরে। উদ্যানের গোলাপ বাগানের অভ্যন্তরে পাকা জলাধারে রয়েছে ব্রাজিলের জলজউদ্ভিদ আমাজন লিলি। অফিস আঙিনা ঘেঁষে আছে নেট হাউস ও নার্সারি। উদ্যানের অফিস এলাকার পশ্চিম পাশে অর্কিড হাউস। চোখে পড়বে জারবেরা, অ্যানথুরিয়াম, বরুন ফেলসিয়া, ক্যামিলিয়া, পারুল, হেলকুনিয়াসহ নানা বাহারি বৃক্ষ। রয়েছে অ্যামহাসটিয়া অ্যাভোক্যাডো, বেগুনি এলামান্ডা, থাইল্যান্ডের গন্ধরাজ। গর্জন বাগানের উত্তর পাশে ভেষজ বাগান।

সর্বশেষ খবর