বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বিপৎসীমা ছাড়াল ধরলা ফের বন্যা পরিস্থিতি

অধিকাংশ প্রধান নদ নদীর পানি বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবারও বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে ধরলা নদী। এতে দেশের উত্তরপ্রান্তের জেলা কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চলে ফের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে ব্রহ্মপুত্রসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেড় মাসেরও বেশি সময় বন্যায় পানিবন্দী থাকার সম্প্রতি বন্যামুক্ত হয়েছে দেশের ৩৩টি জেলা। আবারও নদ-নদীর পানি বাড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বন্যাদুর্গত জেলাগুলোয়।

গতকাল সকাল ৯টায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলা

নদীর পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। কুড়িগ্রামে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে ধরলার পানি। বিজ্ঞপ্তির আট ঘণ্টার মধ্যেই সন্ধ্যার আগে লালমনিরহাটে বিপৎসীমা অতিক্রম করে ধরলা। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ধরলা নদীর মাঝখানের বেশ কিছু চরের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। বন্যার পানিতে ফের তলিয়ে গেছে আমনের খেত। ডুবে গেছে শীতকালীন সবজির আবাদ। শুধু ধরলা নয়, দেশের অধিকাংশ প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, ব্রহ্মপুত্রের পানি আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যমুনার পানি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে আজকের মধ্যে দুই নদ-নদীর পানি সমতলই বৃদ্ধি পেতে পারে। গঙ্গা-পদ্মার পানি স্থিতিশীল থাকলেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার সব প্রধান নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় পর্যবেক্ষণাধীন ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের ৪৬টিতে পানি বেড়েছে। আমাদের লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে মঙ্গলবার বিকালে জেলার কুলাঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বেড়েছে তিস্তার পানিও। তিস্তা ও ধরলার পানি বাড়ায় লালমনিরহাটে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার আদিতমারী, হাতিবান্ধা ও সদরের আটটি ইউনিয়নের অর্ধশত ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে মহিষখোচা ইউনিয়নের বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। তিস্তা গতিপথ পরিবর্তন করায় হুমকিতে রয়েছে দ্বিতীয় সড়ক সেতুটিও। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে চরের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। ডুবে গেছে আমন ও শীতকালীন সবজির খেত। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়,  রবিবার রাতে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সোমবার রাত ৯টায় প্রবাহিত হয় বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। গতকাল বিকালে পানি আবারও বেড়ে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলার চর রাজপুর, চর গোকু-া, চর কালমাটি, চর ফলিমারী, ইশোরকোল, পূর্ব ইচলী, রুদ্রেশ্বর, চর ভোটমারী, চর ডাউয়াবাড়ি, সিন্দুনা, গড্ডিমারী, সানিয়াযান, কুলাঘাট, মোগলহাট এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার আট সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এখন বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ও ধরলা অববাহিকার সবাইকে সতর্ক রাখা হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে মনে হচ্ছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তিস্তার ব্যারাজ পয়েন্টেও পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। সদরের কুলাঘাট ইউপির চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী জানান, দুই মাস পর ধরলার পানি সোমবার থেকে আবারও বাড়তে শুরু করেছে। মঙ্গলবার বিকালে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। গতকাল সকালে আটটি বসতবাড়ি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। দুশ্চিন্তায় নদীপাড়ের মানুষের  চোখে ঘুম নেই। তিস্তা বিধৌত সিন্দুনা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তায় শুরু হয়েছে ভাঙন। ইতিমধ্যে তার ইউনিয়নের পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে আমনসহ শাকসবজি খেত। চরম বিপাকে পড়েছে কৃষক।

 

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, ধরলার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও তিস্তার পানি ব্যারাজ পয়েন্টে ওঠানামা করছে। তবে যে কোনো সময় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ভারত গজলডোবা ব্যারাজের সব গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তায় পানি বাড়ছে। ধরলা ও তিস্তা অববাহিকার চরবেষ্টিত এলাকার চেয়ারম্যানদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর