বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

চেক পাওয়ার বৈধতা প্রমাণ করতে হবে পাওনাদারকে

ডিজওনার মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চেক ডিজঅনার হলেই কেবল চেকদাতাকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। চেক ডিজঅনারের জন্য মামলাকারীকেই আদালতে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি সত্যিকারের পাওনাদার। চেক জালিয়াতির একটি মামলার আপিল খারিজ করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর এসব কথা জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। চেকের টাকা পাওয়ার বৈধতা প্রমাণ করতে না পারায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এ রায় দেয়। গতকাল এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। জাতীয় সংসদের সাবেক  স্পিকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর ভাতিজা ইমরান রশিদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আবুল কাহের শাহিন নামে এক ব্যক্তি সাড়ে চার কোটি টাকার চারটি চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত ঘটনায় ২০১৩ ও ২০১৪ সালে পৃথক চারটি মামলা করেন। এ মামলার বিচার শেষে ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সিলেট আদালত ইমরান রশিদ চৌধুরীকে প্রত্যেক মামলার এক বছর করে চার বছর কারাদন্ড দেয়। একই সঙ্গে ৯ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই হাই কোর্টে আপিল করেন ইমরান রশিদ চৌধুরী। ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট এক রায়ে ইমরান রশিদ চৌধুরীকে খালাস দেয় হাই কোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে আবুল কাহের শাহিন ২০১৭ সালে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। আপিল বিভাগ আবুল কাহের শাহিনের আবেদন খারিজ করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেয়। গতকাল প্রকাশিত রায়ে আপিল বিভাগ বলেছে, চেকের টাকা প্রাপ্তির বৈধতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন আবুল কাহের শাহিন। আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুনসুরুল হক চৌধুরী। অপরপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। পরে মুনসুরুল হক চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন তাতে এখন শুধুই চেক ডিজঅনার হলেই শাস্তি দেওয়া যাবে না। চেক ডিজঅনারের মামলাকারীকেই আদালতে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি সত্যিকারের পাওনাদার। চেক দেওয়ার বৈধ কারণ প্রমাণ করতে না পারলে চেকদাতাকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। এ মামলাটি এখন থেকে নজির হয়ে থাকবে। জানা গেছে, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ৩০ কাঠা জমি বিক্রির জন্য আবুল কাহের শাহিন নামে এক ব্যক্তি ইমরান রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি জমিটি একশ ৫০ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেবেন বলে ইমরান রশিদ চৌধুরীকে জানান। ৯০ দিনের মধ্যে বাজারমূলে জমি বিক্রি করে দিতে পারলে কমিশন হিসেবে বিক্রি মূল্যের শতকরা ১৩ ভাগ পাবেন বলে তাদের মধ্যে ২০১২ সালের ১৩ মার্চ চুক্তি হয়। এই চুক্তির পর ইমরান রশিদ চৌধুরী সাড়ে চার কোটি টাকার চারটি চেক আবুল কাহের শাহিনকে দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমি বিক্রি করে দিতে না পারায় ইমরান রশিদ চৌধুরী চেক চারটি ফেরত চান। কিন্তু আবুল কাহের শাহিন চেক ফেরত দিতে গড়িমসি করেন। এরই মধ্যে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই ইমরান রশিদ চৌধুরী জমিটি আমেরিকান দূতাবাসের কাছে বিক্রি করে দেন। এ অবস্থায় ইমরান রশিদ চৌধুরী ব্যাংকে জানিয়ে দেন যে, উল্লিখিত চারটি চেক যেন নগদায়ন করা না হয়। এরপর আবুল কাহের শাহিন চেকগুলো ব্যাংকে জমা দিলে যথারিতি তা ডিজঅনার হয়। এরপর তিনি টাকা চেয়ে ইমরান রশিদ চৌধুরীকে আইনি নোটিস দেন। এরপর তিনি সিলেট আদালতে পৃথক চারটি মামলা করেন।

সর্বশেষ খবর