শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর ১১০ বছরে

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর ১১০ বছরে

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর আর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন সংগ্রহশালা। প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের দিক থেকে এটি এশিয়া ও বিশ্বের প্রাচীনতম জাদুঘরগুলোর একটি। বরেন্দ্র জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় নাটোরের দিঘাপাতিয়া রাজপরিবারের জমিদার শরৎ কুমার রায়, আইনজীবী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় এবং রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রামপ্রসাদ চন্দ্রের উল্লেখযোগ্য আবদান আছে। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তারা বাংলার ঐতিহ্য ও নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি গঠন করেন। ওই বছর তারা রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে ৩২টি দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করেন। এই নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ করার জন্য শরৎ কুমার রায়ের দান করা জমিতে মিউজিয়ামটির নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্মাণ শেষ হয় ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে। তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেলের প্রচেষ্টায় ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি এক সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বরেন্দ্র জাদুঘরকে এর নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যাপারে স্বাধিকার প্রদান করা হয়। ১৯১৬ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলার লর্ড  কারমাইকেল এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯১৯ সালের ২৭ নভেম্বর লর্ড রোনাল্ডস এর দ্বারোদঘাটন করেন। শুরু হয় এই মিউজিয়ামের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। এরপর থেকে নানা চড়াই-উতরাই পার করে বর্তমান পরিচালকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই জাদুঘরটি সজ্জিত হয়েছে এক আধুনিক মহিমায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান বলেন, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের সংগ্রহশালা খুবই সমৃদ্ধ। খ্রিস্টপূর্ব সময় থেকে এখানে বিভিন্ন সংগ্রহ আছে। এখানে নানা সময়ের সভ্যতা নিয়ে গবেষণা হয়, এ কারণে এটিকে ১৯৬৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেওয়া হয়। বর্তমানে জাদুঘরটি পরিচালনায় ১৪ সদস্যের একটি উপদেষ্টা কমিটি আছে। পদাধিকারবলে এই কমিটির সভাপতি উপাচার্য। দেশের উত্তর-পশ্চিমের শহর রাজশাহীর এক কোলাহলমুক্ত রাস্তার পাশে অভিজাত মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে জাদুঘরটি। এখানেই প্রাচীন মহেঞ্জোদারো সভ্যতার নিদর্শন দেখতে পাওয়া যাবে, আবার বাংলার অতীতকে জানতে হলে এই ভবনেই চোখ রাখতে হবে। অতীতের হাত ধরে ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করছে এই জাদুঘরটি।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক আলী রেজা মুহাম্মদ আবদুল মজিদ জানান, এই জাদুঘরের প্রতœসম্পদ সংগ্রহের পরিমাণ ও গুণগতমান তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। বিশেষ করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ভাস্কর্য এই জাদুঘরের উৎকর্ষ বাড়িয়েছে শতগুণ। ব্রহ্মা-শিব আর বিষ্ণু ভাস্কর্যের সংগ্রহে ও গুণগত মানের দিক দিয়ে এই জাদুঘর অনন্য। প্রাচীনকাল থেকেই জাদুঘরটি জ্ঞান অন্বেষণকারীদের আকৃষ্ট করে আসছে। প্রাচীন গৌরীয় স্থাপত্যশৈলীর ধারায় নির্মিত এই জাদুঘর অল্পদিনের মধ্যেই বঙ্গীয় শিল্পকলায় সমৃদ্ধ ভান্ডার হিসেবে সারাবিশ্বে খ্যাতিলাভ করে। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে এখানে। ২০ হাজারের অধিক প্রত্ন নিদর্শনের মধ্যে এখানে আছে ভাস্কর্য শিল্প, বিভিন্ন মুদ্রা, শিলালিপি, পোড়ামাটির ফলক ও মৃণ¥য় শিল্প, পান্ডুলিপি, চিত্রশিল্প প্রভৃতি। এখানে দেশি-বিদেশি শিক্ষক, গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়ার সুযোগ পান। এমন সব অসাধারণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে চোখ বোলাতে প্রতিদিন গবেষণা জাদুঘরটিতে আসেন হাজারো দর্শনার্থী। দেশের এবং বিভিন্ন দেশের গবেষকরাও এখানে আসেন এই উপমহাদেশের ঐতিহাসিকতা জানতে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর