শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আসছে বিশেষ প্রকল্প

আকতারুজ্জামান

করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ছয় মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অসামান্য ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা সেক্টরে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ‘কভিড-১৯ স্কুল সেক্টর রেসপন্স প্রকল্প’ গ্রহণ করছে সরকার। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। কভিড-১৯-এর প্রভাব মোকাবিলায় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় একটি সময়োপযোগী ও টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলাই এ প্রকল্পের লক্ষ্য। এটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে ভবিষ্যতে করোনার মতো যে কোনো সংকটে শিক্ষার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে মনে করছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রকল্পটি করা হয়েছে। এটি পাস হলে চলতি সেপ্টেম্বরেই কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পের কর্মপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা গেলে ভবিষ্যতেও সংকটকালীন শিক্ষার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এটি বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ করবেন। জানা গেছে, প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১২৬ কোটি ৫৩ লাখ উন্নয়ন সহযোগী ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন (জিপিই)’ থেকে অনুদান পাওয়া যাবে। এতে সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ খুবই কম। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২-এর জুন পর্যন্ত।

তথ্যমতে তিনটি কমপোনেন্টের মাধ্যমে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম কমপোনেন্টে সংকটকালীন সিস্টেম উন্নয়ন, দ্বিতীয়ত করোনা-পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা ও তৃতীয় ধাপে ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় টেকসই ব্যবস্থা চালু করা হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য রেডিও, টেলিভিশন ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফরমে প্রচারের জন্য প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের কনটেন্ট ডেভেলপ করা হবে। পাহাড়, হাওর, বিল ও চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিখনসামগ্রী তৈরি ও বিতরণের ব্যবস্থা থাকবে। করোনা-উত্তর সব শিশুকে স্কুলে ফিরিয়ে আনা নিশ্চিত করতে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন শিক্ষকরা। স্কুল পুনরায় চালু করতে স্কুল রি-ওপেনিং প্ল্যান প্রণয়ন থাকবে প্রথম উপাদান।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর পর কাজ চলবে দ্বিতীয় উপাদানের। এ উপাদানের আওতায় ২০ হাজার স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি পালনের উপকরণ সরবরাহ করা হবে। শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পরিকল্পনা তৈরি ও দেশের মোট ২ হাজার শিক্ষককে এ প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য ধারাবাহিক অ্যাসেসমেন্ট ও শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিখন পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে।

ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় দূরশিখন টেকসই ব্যবস্থা চালু করতে কনটেন্ট তৈরি ও এ শিখন পদ্ধতিকে মূল শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। সংকট মোকাবিলায় একটি জরুরি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কার্য পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। সংকটকালে সরকার স্থানীয় প্রশাসন, বেসরকারি সংস্থা, অভিভাবকসহ স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ সংকট মোকাবিলা করবে।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সময়ে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদান অব্যাহত রেখেছে সরকার।

সর্বশেষ খবর