রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে এমরানুল হক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঢাকা ব্যাংক

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থায়ন জরুরি

আলী রিয়াজ

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থায়ন জরুরি

এমরানুল হক

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমরানুল হক বলেছেন, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যাংকিং খাতে করোনার কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে পরিচালন মুনাফা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। করোনাকালীন কয়েক মাস নতুন আমানত সংগ্রহ বা ঋণ প্রদান কোনোটাই সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার পথে। এ অবস্থায় অর্থনীতিতে গতি আনতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। পুরোপুরি গতি ফিরতে আগামী মার্চ পর্যন্ত লাগতে পারে। আর মোট ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কয়েক বছর লাগবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। বেসরকারি খাতের অন্যতম ঢাকা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা এমরানুল হক প্রায় ৩৩ বছর ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে কাজ করেছেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। ১৯৯৮ সালে ঢাকা ব্যাংকে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই করোনা মহামারীর ভয়াবহ সংকট মোকাবিলা করেন। ঢাকা ব্যাংকের এসব সংকট সম্ভাবনা, দেশের ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেছেন এমরানুল হক।

এমরানুল হক বলেন, করোনার কারণে আয় সংকুচিত হওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ব্যয় সংকোচন বা ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। ব্যাংকের যত নিয়ন্ত্রণযোগ্য ব্যয় খাত আছে তার প্রতিটিতে কাজ করেছি। বিভিন্ন ব্যাংক এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের বেতন পর্যন্ত কমিয়েছে। আমরা আমাদের অন্যান্য ব্যয় খাতগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রেখেই এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের লেনদেনের পরিমাণও বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে নতুন করে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। করোনা সংকটে যে ক্ষতির সম্মুখীন আমরা হয়েছি তা কাটিয়ে উঠতে লম্বা সময় লাগতে পারে। সরকার ঘোষিত প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে দেশের ব্যাংকিং খাত। সীমিত ঋণ আদায়, আমানতের প্রবৃদ্ধি হ্রাসের মতো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলোর সার্বিক চেষ্টার ফলে ঘোষিত প্যাকেজের সিংহভাগ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের মাঝে বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।

ঢাকা ব্যাংকের এমডি বলেন, করোনাকালীন নতুন আমানত সৃষ্টি হয়নি বললেই চলে। তাই প্রণোদনা বাস্তবায়নে স্বল্পসুদে ঋণ বিতরণের ফলে ব্যাংকগুলোর তারল্যের ওপর কিছুটা চাপ এসেছে। প্রণোদনার আওতায় প্রদত্ত ঋণ সুবিধাগুলোর মেয়াদ নির্দিষ্ট হওয়ায় এই ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকগুলোকে দুই বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ফলে নতুন আমানতের সুযোগ সৃষ্টি না হলে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়তে পারে। তবে নতুন ঋণ প্রদানের জন্য উপযোগী ক্ষেত্র প্রস্তুত হওয়ার আগ পর্যন্ত অলস তারল্যও ব্যাংকগুলোর জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারীতে ঋণ এবং আমানত দুই দিক  থেকেই ব্যাংকগুলো সমস্যার মুখে পড়ছে। এমতাবস্থায়, ঢাকা ব্যাংকের অবস্থা বলব তুলনামূলক ভালো। একদম সূচনালগ্ন থেকেই ঢাকা ব্যাংক নিয়মতান্ত্রিক ব্যাংকিং করে আসছে। কিছু ছোটখাট দুর্ঘটনা ব্যতীত ঢাকা ব্যাংকের ইতিহাসে বড় কোনো ব্যাংকিং বিপর্যয়ের নজির নেই। আমাদের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত গ্রাহকদের ব্যবসায় সম্প্রসারণের ক্ষেত্রেও আমরা সহায়তা করছি। সমগ্র ব্যবসায় খাত বর্তমান পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত। যেহেতু করোনার প্রভাব এখনো সম্পূর্ণরূপে  শেষ হয়ে যায়নি, তাই ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কারণে অধিকাংশ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পরিস্থিতি বিবেচনা করেই বিনিয়োগে যেতে চাইছে। তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান করোনাকালীনও ব্যবসায় সম্প্রসারণে সচেষ্ট আছে। তাই বলা যেতে পারে যে বর্তমানে সামগ্রিক ব্যবসায়িক খাতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ঢাকা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ১ এপ্রিল থেকে ৯ শতাংশ ঋণ সুদহার নির্ধারিত হওয়ায় ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে, যা কোনোভাবেই পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। আমরা  চেষ্টা করছি অনগদ লেনদেন মানে আমদানি, রপ্তানি এবং গ্যারান্টি ব্যবসায়ে অধিক গুরুত্ব দিতে। সেই লক্ষ্যে ঢাকা ব্যাংকে আমরা সব ধরনের ওভারহেড খরচগুলোকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করছি।

সর্বশেষ খবর