সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রিমান্ড শেষে কারাগারে স্বাস্থ্যের সেই আবজাল

আদালত প্রতিবেদক

দুর্নীতির পৃথক দুই মামলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার বরখাস্ত হওয়া হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেনকে ১৪ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল আসামি আবজালকে রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে দুদক। পরে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর আবজালের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এর আগে গত ২৬ আগস্ট আবজাল হোসেন আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের জানান, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে  দুই মামলায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। মামলা দুটির মধ্যে একটিতে আবজাল হোসেন একা আসামি এবং অন্যটিতে তার স্ত্রী রুবিনা খানম যৌথভাবে আসামি। গত বছর ২৭ জুন দুদকের উপপরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ অবৈধ সম্পদ অর্জন, মানি লন্ডারিং ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলা দুটি করেন। মামলা দুটিতে আবজাল দম্পতির বিরুদ্ধে ৩৬ কোটি ৩০ লাখ ৬১ হাজার ৪৯৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া ২৮৪ কোটি ৫১ লাখ ১৩ হাজার ২০৭ টাকার মানি লন্ডারিং অপরাধের অভিযোগও করা হয়েছে। পরে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামির জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের ২২ জানুয়ারি আবজাল ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের সম্পদ জব্দ (ফ্রিজ) করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালতের আদেশে আবজাল দম্পতির স্থাবর-অস্থাবর যাবতীয় সম্পদ হস্তান্তর বা লেনদেন বন্ধ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়। আবজাল হোসেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদফতরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার। তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে ব্যবসা করেন।

দুদক সূত্র জানায়, আবজাল সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকার মতো বেতন পান। অথচ চড়েন হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের গাড়িতে। ঢাকার উত্তরায় তার ও স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে-বিদেশে আছে বাড়ি-মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমে গত বছরের ১০ জানুয়ারি আবজালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। দুদক সূত্র আরও জানায়, আবজাল হোসেনের বাড়ি ফরিদপুরে। ১৯৯২ সালে তৃতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তার। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সুপারিশে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৫টি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে অফিস সহকারী পদে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন তিনি। ২০০০ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ক্যাশিয়ার পদে বদলি হন। এই ধারাবাহিকতায় তিনি বর্তমান পদে যোগ দেন। সম্প্রতি তাকে সাতক্ষীরায় বদলি করা হলেও দুই মাসের মধ্যেই ঢাকা ফিরে আসেন আবজাল।

আবজাল হোসেনের স্ত্রী রুবিনা খানম একই প্রকল্পে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা শুরু করেন। মূলত স্বামী-স্ত্রী মিলে স্বাস্থ্য অধিদফতরে একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্য তারা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর