বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

১৪ বছর কনডেম সেলে, অবশেষে খালাস লাকসামের হুমায়ুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আট বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রী হত্যা মামলায় ১৪ বছর কনডেম সেলে থাকার পর অবশেষে খালাস পেয়েছেন কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ তার জেল আপিল মঞ্জুর করে রায় দেয়। হুমায়ুনের আইনজীবী জানান, খালাস হওয়ায় আর কোনো মামলা না থাকলে তার এখন মুক্তি পেতে বাধা নেই।

এর আগে ২০০৬ সালের ৫ এপ্রিল বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ পান হুমায়ুন। সেই থেকে তিনি কনডেম সেলে। তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন ২০০৪ সালের জুলাই মাসে ওই হত্যাকান্ডের পর। পরবর্তীতে ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল শুনানি শেষে ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টও তার মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে। আদালতে হুমায়ুনের জেল আপিলের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। হুমায়ুনের আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ বলেন, আপিল বিভাগ তার জেল আপিল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছে। ফলে তিনি এখন এই মামলা থেকে খালাস। অন্য কোনো মামলা না থাকলে তার মুক্তি পেতেও বাধা নেই। নথি থেকে ঘটনার বিবরণী উল্লেখ করে এ আইনজীবী জানান, ২০০৪ সালের ৩০ জুন লাকসামের কনকশ্রী গ্রামের সাকেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী বেলা সোয়া ১০টার দিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু স্কুল ছুটি হওয়ার পরও বাড়ি ফিরে না আসায় স্কুলে খোঁজ করে তার অভিভাবকরা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারে শিশুটি স্কুলে যায়নি। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি ও সম্ভাব্য স্থানে তাকে খুঁজে না পেয়ে ওই দিনই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিশুটির চাচা মো. জসীম উদ্দিন। ষষ্ঠ শ্রেণির প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়ার পথে মাথা ব্যথায় শিশুটিকে সাকেরা গ্রামের মাস্টার বাড়ির পাশে কালভার্টের ওপর শুয়ে পড়তে দেখেন। এ সময় আরও ৫-৬ জন লোক ছিল সেখানে। ওই সময় হুমায়ুন কবির এসে সবাইকে তাড়িয়ে দিতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী যাওয়ার সময় শিশুটিকে বাড়ি যেতে বললে হুমায়ুন কবির শিশুটির মামা পরিচয় দিয়ে বলে, সে শিশুটিকে বাড়ি পৌঁছে  দেবে। কিন্তু হুমায়ুন কবির বাড়ি পৌঁছে দেয়নি। পরে এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থার আবেদন জানিয়ে লাকসাম থানায় এজাহার দায়েরের পর ওই বছরের ২ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে পুলিশ। ওই বছরের ৪ জুলাই ট্রাকচালক হুমায়ুন কবিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই দিনই কালভার্টের পাশে জঙ্গলের ভিতর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়। পরে আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ বলেন, এ মামলায় ক্রেডিবল সাক্ষী ছিল না। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে শিশুটির লাশ উদ্ধারের সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেখানে ছিলেন। অথচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিচারের সময় জেরা করা হয়নি। এ ছাড়া হুমায়ুন কবির তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন শিশুটি তার খালাত বোনের মেয়ে। শিশুর বাবা তার কাছে ১৬০০ টাকা পেতেন। কিন্তু শিশুটির বাবা সাক্ষ্যে বলেছেন তিনি হুমায়ুন কবিরকে চেনেন না। আবার শিশুটির মাকেও এ মামলায় সাক্ষী করা হয়নি। শিশুটির মাকে সাক্ষী করা হলে জানা যেত হুমায়ুন কবির আদৌ পরিচিত কেউ কিনা। ফলে এখানে সন্দেহ রয়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর