বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
হাই কোর্টের অভিমত

গ্রাহকের অবহিতকরণ ছাড়া কল রেকর্ড সংগ্রহ বন্ধ করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফরমাল রিকুইজিশন ও গ্রাহককে অবহিতকরণ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি থেকে কললিস্ট বা কল রেকর্ড সংগ্রহ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে বলে অভিমত দিয়েছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে ডিজিটাল ডকুমেন্টকে সাক্ষ্য হিসেবে নিতে এভিডেন্স অ্যাক্টও সংশোধন করতে মতামত দিয়েছে আদালত। শিশু সৈকত হত্যা মামলায় বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, মো. রুহুল কুদ্দুস ও এ এস এম আবদুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর হাই কোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে এমন অভিমত দেওয়া হয়েছে। গত বছর ২৮ আগস্ট ঘোষিত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। ৪৯ পৃষ্ঠার এ রায়ের অনুলিপি গতকাল গণমাধ্যমকে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। শিশু সৈকতকে অপহরণের পর হত্যা মামলার প্রধান আসামি নেত্রকোনা সরকারি কলেজের ছাত্র অলি আহম্মদকে (২২) মৃত্যুদন্ড থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে হাই কোর্টের রায়ে। মামলার বিবরণে জানা যায়, এক লাখ টাকা চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় সৈকতকে (৭) হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানায় ২০১০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলা করেন সৈকতের বাবা মো. সিদ্দিকুর রহমান। ২০১১ সালের ১৩ অক্টোবর এই মামলায় প্রধান আসামি নেত্রকোনা সরকারি কলেজের ছাত্র অলি আহম্মদকে (২২) মৃত্যুদন্ড দেয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪। এ ছাড়া পলাতক আসামি সবুজ মিয়া ও তাপস বন্ধু সাহাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। তবে মামলার আরেক আসামি আনিছ মিয়া শিশু হওয়ায় তাকে ১০ বছরের সাজা দেয় একই আদালত। আইন অনুযায়ী শিশুর অপরাধের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হতে পারে কিনা, এ নিয়ে আইনগত প্রশ্ন উত্থাপিত হলে হাই কোর্ট বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়। আদালত রায়ে বলে, এটি আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতা যে, আজকাল নাগরিকদের মধ্যে ব্যক্তিগত অডিও-ভিডিওসহ ব্যক্তিগত যোগাযোগের বিষয়গুলো প্রায়ই বিভিন্ন উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয় এবং প্রকাশিত হয়। সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে আমাদের নাগরিকদের চিঠিপত্রের এবং যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ে গোপনীয়তার অধিকারের নিশ্চয়তা অবশ্যই ভুলে যাওয়া উচিত নয় বলে রায়ে বলা হয়েছে।

রায়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা বজায় রাখার সাংবিধানিক ম্যান্ডেট রক্ষার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন এবং বাংলাদেশে পরিচালিত ফোন সংস্থাগুলোর একটি বৃহৎ দায়িত্ব রয়েছে। সংবিধানের সঙ্গে মেলে না এমন আইনের অনুমতি না থাকলে তারা (কোম্পানিগুলো) তাদের গ্রাহক ও দেশের নাগরিকদের যোগাযোগ সম্পর্কিত কোনো তথ্য কাউকে সরবরাহ করতে পারে না।

রায়ে আরও বলা হয়েছে, কারও যোগাযোগের তথ্য সম্পর্কিত কল তালিকা এবং তথ্যের জন্য কোনো মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সংস্থা/অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানাতে হবে। অন্যথায় সরবরাহ করা দস্তাবেজটি তার স্পষ্টতার মূল্য হারাবে এবং সরবরাহকারী ব্যক্তি/কর্তৃত্ব সংবিধানের আওতাধীন গ্যারান্টিযুক্ত একের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের পক্ষেও দায়বদ্ধ হবে। সৈকত হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত অভিযুক্ত অলির কল তালিকা তার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিল, কারণ সেগুলো বেসরকারি মোবাইল অপারেটর সংস্থা কর্তৃক অথরাইজড করা ছিল না বা যারা সংগ্রহ করেছে তাদের স্বাক্ষরও ছিল না।

হাই কোর্ট আরও বলেছে, সাক্ষ্য-প্রমাণ আইন সংশোধন না করা বা ডিজিটাল ডকুমেন্টকে প্রমাণ হিসেবে আইন করা না হলে কোনো ব্যক্তির কললিস্ট এবং টেলিফোন কথোপকথনের কোনো স্পষ্ট মূল্য থাকতে পারে না। রায়ে প্রত্যাশা করা হয়েছে যে, আইন সংশোধন করতে বা এ লক্ষ্যে একটি নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেবে।

রায়ে আরও বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর একমাত্র ব্যতিক্রম হলো, সন্ত্রাসী ব্যক্তি দ্বারা কোনো ইন্টারনেট সাইটের ফেসবুক, স্কাইপ, টুইটারের মাধ্যমে যে কোনো আলোচনা এবং কথোপকথন বা তার অপরাধের সম্পর্কিত স্থির চিত্র বা ভিডিও পুলিশ বা আইন গ্রয়োগকারী সংস্থা দ্বারা তদন্তের জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হলে তা প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।

সর্বশেষ খবর