শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্যার পানিতে পচছে সোনার ফসল

বিপৎসীমার ওপরে ৯ নদী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্যার পানিতে পচছে সোনার ফসল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ফসল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বন্যার পানিতে ডুবে আছে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্য অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল ও চর। দিনের পর দিন পানিতে নিমজ্জিত থেকে পচন ধরেছে নতুন লাগানো আমন, রোপা আউশ, স্থানীয় জাতের গাঞ্জিয়া, চরাঞ্চলের পাকা বর্ষালি ধানসহ মাষকলাই, মরিচ ও শীতকালীন আগাম সবজি। তিন মাসের মধ্যে পঞ্চম দফা বন্যার আঘাতে ভেঙে গেছে দরিদ্র কৃষকের আর্থিক মেরুদন্ড। বন্যা আরও দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশ বড় ধরনের খাদ্য সংকটে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে চার দফা বন্যার প্রভাবে বাজারে চালসহ সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকালে ৯টি নদ-নদীর পানি ১০টি পানিসমতল স্টেশনে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানিসমতল স্টেশনের ৫৩টিতে পানি বেড়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি হ্রাস পাচ্ছে। গঙ্গার পানি স্থিতিশীল রয়েছে, তবে বাড়ছে পদ্মার। এদিকে বন্যার পানি চলে এসেছে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত। গতকাল টাঙ্গাইলের এলাসিন ঘাটে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে ধলেশ্বরীর পানি। নাটোরের সিংড়ায় গুর নদের পানি বিপৎসীমার ১১০ ও বগুড়ার চকরহিমপুরে করতোয়ার পানি ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চর ও নিম্নাঞ্চলের পাশাপাশি অনেক উঁচু এলাকাও তলাতে শুরু করেছে। প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ায় অনেক শাখা নদীও ফুলে ফেঁপে উঠছে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য- বগুড়া : বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা ও বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বিপৎসীমার ২৪ ও বাঙালি নদীর পানি ২৭ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কুড়িগ্রাম : ধরলার পানি কমলেও বাড়ছে ব্রহ্মপুত্রের। জেলার ১৮ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমির ফসল ফের পানিতে তলিয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ায় অনেকেই ধারদেনা করে দ্বিতীয় দফা আমন আবাদ করেছিলেন। ফের সে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। সেই সঙ্গে নদী ভাঙনে প্রতিদিন নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার।

সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের দছিমুদ্দিন গ্রামের এলাহি বকস জানান, ‘আমাদের এলাকায় নদী ভাঙনে বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে আমাদের দ্বিতীয়বার কষ্ট করে আবাদ করা আমন ধান। দিনের পর দিন পানিতে তলিয়ে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে ধান।’

এদিকে সাম্প্রতিক টানা দেড় মাসের বন্যার ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশ। ভেঙেচুরে একাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট। যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্যাক্রান্ত ৩৩ জেলার মানুষকে। গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, চলতি বছর কালিয়াকৈর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ১৮৮টি গ্রাম বন্যার কবলে পড়ে। এতে উপজেলা এলজিইডি বিভাগের প্রায় ৩০টি সড়ক ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগের প্রায় ৬৫০টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৩২ কোটি টাকা। বন্যার পানি নামলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের কাজ এখনো শুরু হয়নি। এসব বেহাল, ভাঙাচোরা ও বিচ্ছিন্ন সড়ক দিয়ে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আহম্মেদ রেজা আল মামুন জানান, এ দফতরের আওতাধীন বেশির ভাগ গ্রামীণ রাস্তা এখনো পানির নিচেই রয়েছে। তবে এসব ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পানি কমে গেলেই মেরামত করা হবে। কালিয়াকৈর উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা প্রকৌশলী সাজ্জাত কবীর বলেন, ‘চলতি বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর তালিকা করা হয়েছে। খুব শিগগিরই এসব সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর