শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

আকামা নবায়নে টাকা চান কফিলরা সৌদি প্রবাসীরা বিপাকে

টিকিট পাচ্ছেন টোকেনধারীরা

জুলকার নাইন

স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিসার মেয়াদ না বাড়ায় সৌদি কফিলদের ওপরই নির্ভর করছে সৌদিফেরত প্রবাসীদের পুনরায় কাজে যোগ দেওয়া। এর সুযোগ নিচ্ছে সৌদি আরবের অনেক নিয়োগকর্তাই। আকামা ও ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর নামে অনেক সৌদি মালিকের বিরুদ্ধে আড়াই থেকে চার লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলছেন সৌদিফেরত প্রবাসীরা। টাকা নিয়েও অনেক সৌদি মালিক ছুটি ও আকামার মেয়াদ না বাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। ফলে আকামা ও ভিসার মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে সৌদি আরবে মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন প্রবাসীরা। আবার অনেক প্রবাসী সরকারি প্রকল্পে কাজ করায় নেই কফিল। ভিসা ও আকামার মেয়াদ বাড়াতে কার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন তা বুঝতে পারছেন না। ফলে সৌদি প্রবাসীদের ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে। প্রবাসীরা বলছেন, সৌদি আরবে ভালো খারাপ দুই ধরনের কফিলই রয়েছে। ভালোরা এক কথায় প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য সব ধরনের কাগজপত্র করে দেন। কিন্তু খারাপ কফিলের সংখ্যাই বেশি। আবার কফিলের সঙ্গে ভালো যোগাযোগও নেই বেশিরভাগ প্রবাসীর। অনেক কফিল পুরনোদের ফেরতই নিতে আগ্রহী নন। অনেক সৌদি নাগরিক নিজেরা কোনো কাজ করে দেওয়াকে বাড়তি ঝামেলা মনে করেন। আবার আকামা নবায়নের ক্ষেত্রে টাকা দিতে হওয়ায় এসব করতে চায় না। অনেক কফিল যা লাগে তার চেয়ে বাড়তি টাকা দাবি করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলা হলেও এখন সৌদি সরকার চাচ্ছে সঠিক ভিসাধারীদের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে। তাই একটু যাচাই-বাছাই করে অরিজিনাল কাগজপত্র দেখে তারা ভিসার মেয়াদ বাড়াবে। এজন্য স্বীকৃত সার্ভিস সেন্টারগুলোর মাধ্যমে আবেদন নিচ্ছে ঢাকায় সৌদি দূতাবাস। সার্ভিস সেন্টারগুলোর কর্মকর্তারা জানান, ঢাকায় দূতাবাসের মাধ্যমে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে কয়েকটি কাগজপত্র প্রয়োজন হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- সৌদি জাওয়াজাতের প্রিন্টের মূল কপি যেখানে আকামার মেয়াদ লেখা থাকবে, সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত কফিলের আবেদনযুক্ত চিঠি, পাসপোর্ট ও এক্সিট রি-এন্ট্রি ভিসার মূল কপি, সৌদি আরবের এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার তারিখসহ প্রিন্টের মূল কপি এবং মেয়াদসহ আকামার ফটোকপি। সৌদি আরবে ফিরতে মরিয়া প্রবাসীরা বলছেন, দূতাবাস থেকে যেসব কাগজপত্র চাওয়া হচ্ছে তা কারও পক্ষেই দেওয়া সম্ভব নয়। অনেকের কফিল ফোন ধরছেন না। অনেকেই কোম্পানিতে চাকরি করতেন, তাদের কোম্পানি এখন যোগাযোগ করছে না। এই অবস্থায় কফিল থেকে কাগজপত্র আনা সম্ভব নয়। যেসব কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে তারাও সুযোগ নিচ্ছেন। কয়েকগুণ টাকা নিয়ে মেয়াদ বাড়াচ্ছেন। আবার প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেক প্রবাসী।

তবে যাদের আকামার মেয়াদ আছে তাদের অনেকেই কফিলের মাধ্যমে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে পারছেন। তারা স্পন্সর বা কফিলের মাধ্যমে অনলাইনে ২০০ রিয়াল জমা দিয়ে এক্সিট রি-এন্ট্রি ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে পারছেন। এজন্য ভিসার মেয়াদ বাড়াতে কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করেই অনেকের কাজ হচ্ছে। তবে কুমিল্লার এক প্রবাসী নজরুল জানালেন, আমার আকামার মেয়াদ থাকলেও ভিসার মেয়াদ বাড়াতে কফিল এক হাজার রিয়াল চেয়েছে। সৌদি প্রবাসী বগুড়ার আকবর জানান, সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছেন যারা ফ্রি ভিসার নামে থাকতেন এবং আকামার মেয়াদ শেষ হয়েছে। এ ধরনের বড় সংখ্যক প্রবাসী প্রতিবছর কোনো না কোনোভাবে আকামা নবায়ন করে সৌদি আরবে চাকরি করতেন। তাদের মূলত কফিলের সঙ্গে তেমন কোনো যোগাযোগই নেই। তারা আসলে কোনোভাবে ফিরতে পারবে কিনা তা নিয়েই তৈরি হয়েছে সংশয়।

টিকিট পাচ্ছেন টোকেনধারীরা : টোকেন পেতে দীর্ঘ ভোগান্তি হলেও ইতিমধ্যেই টোকেন সংগ্রহকারীরা সাধারণভাবেই টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন। গতকাল প্রায় ৪০০ যাত্রীকে সৌদি আরবে যাওয়ার টিকিট দিয়েছে সৌদি এয়ারলাইনস। গতকাল সকাল সাড়ে নয়টা থেকে লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীদের টিকিট দেওয়া হয়। এয়ারলাইনস কর্মকর্তারা জানান, এ-১ থেকে এ-২০০ ও বি-১ থেকে বি-২০০ এই ৪০০ প্রবাসী যাত্রী টিকিট পেয়েছেন। আগামী এভাবেই টোকেনধারীদের টিকে দেওয়া হবে। আগামী ৪ অক্টোবর পরবর্তী টোকেন বিতরণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর