শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে বিপাকে ট্রাম্প

বাইডেনের পক্ষে নামলেন ৫৬ কর্মকর্তা

সাইফ ইমন

শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে বিপাকে ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আর এক মাস। সরাসরি তিন বিতর্কের প্রথমটিতে গত মঙ্গলবার মুখোমুখি হয়েছিলেন দুই প্রার্থী। যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হওয়া বর্ণবাদবিরোধী ঝড় ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। দাবি আদায়ের জন্য লড়ছেন কৃষ্ণাঙ্গরা। নির্বাচনের সময় তাই প্রসঙ্গটি চলে এসেছে। ফলে শ্বেতাঙ্গদের নিয়ে বিপাকে আছেন ট্রাম্প। সাম্প্রতিককালে আমেরিকায় একের পর এক কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এ কাজ তিনি সমর্থন করেন না। এ একটি বাক্য বলেই পুরো বিষয়টিকে বামপন্থি ও লিবারালদের দিকে ঠেলে দেন। বলেন, তাদের উসকানিতেই বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন নিয়েও কোনো মন্তব্য করেননি ট্রাম্প। পরের দুটি বিতর্ক এ মাসের ১৫ ও ২২ তারিখে। প্রথম বিতর্কের পর সিএনএনের তাৎক্ষণিক জরিপে ৬০% অংশগ্রহণকারী জানান, বাইডেন ভালো করেছেন। ট্রাম্পের পক্ষে রায় দেন ২৮%। বিতর্কের আগে তারাই বাইডেনের পক্ষে ছিলেন ৫৬% ও ট্রাম্পের পক্ষে ৪৩%। এদিকে মতামত জরিপে দেখা গেছে, এখানেও বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে। তবে নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, কয়েকটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে উভয়ের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। আরও দেখা গেছে, ১০ জনের মধ্যে একজন ভোটার কীভাবে ভোট দেবেন, এখনো মনস্থির করতে পারেননি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, তিন পর্যায়ের মধ্যে মঙ্গলবার রাতের প্রথম বিতর্কে প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের চলমান মনোভাবে খুব একটা পার্থক্য তৈরি হয়নি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল যাই হোক না কেন তা মেনে নেবেন বলে জানিয়েছেন জো বাইডেন। তবে নির্বাচনের ফল মেনে নেওয়ার প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে যান ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমি আমার সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে যেতে এবং সতর্কতার সঙ্গে সবকিছু পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানাচ্ছি।’ নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন বাইডেন। তিনি বলেন, ‘আমার পক্ষে যাক বা আমার পক্ষে না যাক আমি নির্বাচনের ফলকে সমর্থন করব।’

বাইডেনর পক্ষে ৫৬ কর্মকর্তা : গত আগস্টে ৭০ জন সদস্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল ‘ফরমার রিপাবলিকান ন্যাশনাল সিকিউরিটি অফিশিয়ালস ফর বাইডেন’ নামে গ্রুপ। পরে তারাসহ প্রায় ১৩০ জন সাবেক রিপাবলিকান কর্মকর্তা এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরোধিতা করে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে যোগ দিয়েছেন। তার মধ্যে সাতজন সরাসরি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। বাকিরা রোনাল্ড রিগ্যান, জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ, জর্জ ডব্লিউ বুশের মতো রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের অধীনে জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, গতকাল বাইডেনের প্রচারণায় অংশ নেন অন্তত ৫৬ জন সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তার মধ্যে ছিলেন এফবিআইয়ের সাবেক সহকারী পরিচালক গ্রেগ ব্রাউনার, সিআইএর সাবেক চিফ অব স্টাফ ল্যারি ফাইফার, ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের সাবেক উপপরিচালক অ্যালডেন মুনসন প্রমুখ। পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন, ফ্লোরিডাসহ মোট সাতটি অঙ্গরাজ্যে প্রচারণা চালাবেন সাবেক এই কর্মকর্তারা। খবরে বলা হয়, এ প্রচারণার বিবরণ ‘ফক্স অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’ টেলিভিশন শোর বিজ্ঞাপনেও দেখা যাবে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প এ শো নিয়মিত দেখেন। এদিকে জো বাইডেনের পক্ষে রিপাবলিকান প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তাদের এ প্রচারণাকে ‘আনুগত্যহীন সাবেক কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা-সংশ্লিষ্টরা।

অসত্য বলেছেন ট্রাম্প : মঙ্গলবার রাতের বিতর্কের পর মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন ও ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি দুই প্রার্থীর বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করেছে। সিএনএন বলছে, বিতর্কে একের পর এক অসত্য বলেছেন ট্রাম্প। তার তুলনায় মোটা দাগে সত্য বলেছেন বাইডেন।

ট্রাম্পের ট্যাক্স ফাঁকি নিয়ে হইচই : বিলিয়নিয়ার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা নিয়ে সারা বিশ্বে বিবেকসম্পন্ন মানুষ যখন হতভম্ব, ঠিক তখনই অবাক করা তথ্য দিয়েছেন একসময় ট্রাম্পের গোল্ফ ক্লাবের বাবুর্চি জেসাস লিরা। অভিবাসনের মর্যাদা নেই (অবৈধ অভিবাসী) মেক্সিকান লিরার। ট্রাম্পের অধীনে কাজের সময় পাওয়া বেতন বাবদ বার্ষিক যে ট্যাক্স লিরা দিয়েছেন তাও ট্রাম্পের দেওয়া বার্ষিক ৭৫০ ডলারের বেশি। ফেডারেল ইনকাম ট্যাক্স প্রদানে ট্রাম্পের এ ভানুমতির খেল লিরাকেও বিস্ময়ে হতবাক করেছে বলে বুধবার জানিয়েছেন মার্কিন গণমাধ্যমকে। এমনকি লিরার ট্যাক্স রিটার্নের নথিও (ডব্লিউ টু) নিউইয়র্কের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ‘ডেইলি নিউজ’ প্রকাশ করেছে। নিউইয়র্কের ওয়েস্টচেস্টার কাউন্টি গোল্ফ ক্লাবের সাবেক এই বাবুর্চি লিরা প্রচ- ক্ষোভ আর হতাশার সঙ্গে বলেন, ‘আমি বুঝে উঠতে পারছি না আমার সাবেক বস কীভাবে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন! এটি কীভাবে সম্ভব?’

সর্বশেষ খবর