শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

পকেট দেখলেই টাকার পরিমাণ বোঝে ওরা

মাহবুব মমতাজী

রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে মাহমুদ টাওয়ারের সামনে দিয়ে রিকশায় যাচ্ছিলেন এক আইনজীবী। তাকে দেখে পলাশ নামে একজন সঙ্গে থাকা কয়েকজনকে বলেন, রিকশায় যাওয়া ওই ব্যক্তির পকেটে ২ লাখের বেশি টাকা আছে। এর পরই ওই আইনজীবীকে সালাম দিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ২ লাখ ২২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন পলাশরা। এটি ৫ আগস্টের ঘটনা। পরদিন এ ঘটনায় রাজধানীর বংশাল থানায় একটি  মামলা হয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর সাইফুল নামে একজনকে রামপুরা ব্রিজের ঢাল থেকে গ্রেফতার করে। এরপর বাড্ডার সেকান্দারবাগ জামে মসজিদ গলি থেকে শামসুল আরেফিনকে এবং পুরান ঢাকার ওয়ারীর সালাউদ্দিন হাসপাতালের সামনে থেকে পলাশকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর পলাশ পুলিশকে জানান, তিনি মানুষের প্যান্টের পকেট দেখলেই বলতে পারেন সেখানে কত টাকা রাখা আছে। এর পরই সুযোগ বুঝে ওই ব্যক্তিকে আটকে তার সবকিছু ছিনিয়ে নেন। এমন কাজ তিনি গত ১০ বছর ধরে করে আসছেন। তার দেওয়া তথ্যে ৮ সেপ্টেম্বর শাহজাহানপুর থেকে দেলোয়ার হোসেন পরশ ওরফে কালা মানিককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

রাজধানীর ১১ স্থানে রয়েছে ‘সালাম পার্টি’র এমন পাঁচ চক্র। এরা সালাম দিয়ে ও ইচ্ছাকৃত ধাক্কা দিয়ে, কোমরে বেল্টের সঙ্গে রাখা মানিব্যাগ বা খেলনা পিস্তল দেখিয়ে ভীতি প্রদর্শন করে বিভিন্ন কৌশলে বংশাল, রামপুরা, বাড্ডা, শাহবাগ, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, সদরঘাট, কেরানীগঞ্জ, তেজগাঁও, বাসাবো, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সামনে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ছিনতাই করে আসছে। এদের প্রতিটি দলে একজন করে দলনেতা থাকে।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ছিনতাইকারীরা জানায়, ছিনতাইকালে যে দলনেতার ভূমিকা পালন করে, সে ছিনতাই করা টাকা থেকে গুডলাক হিসেবে প্রতি হাজারে ২০০ টাকা করে বেশি পায়। আর ‘সালাম পার্টি’র পাঁচ চক্রের মধ্যে আছে পলাশ গ্রুপ, নাসির গ্রুপ, শহিদ গ্রুপ, সোহাগ গ্রুপ ও পরশ গ্রুপ। এসব গ্রুপের সদস্যদের প্রত্যেকের নামেই ঢাকার বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এরা রিকশা চালানোর আড়ালে ছিনতাই করে। তাদের চক্রগুলো পারিবারিকভাবে গড়ে তোলা। সদস্যরা একে অন্যের আত্মীয়।

বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন ফকির এ প্রতিবেদককে জানান, চক্রের হোতা হাসানের আত্মীয় জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীরের আত্মীয় নজরুল এবং পলাশের আত্মীয় মিরাজ। তারা নিজেরাই রিকশাচালকের বেশ নিয়ে ঢাকায় চলাফেরা করেন। পুলিশের তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৭ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় নগদ ৪ লাখ টাকা নিয়ে বংশালের বাসা থেকে বের হন সেলিম নামে এক ব্যক্তি। টাকাগুলো ছিল চার-পাঁচ মাস আগে তার বন্ধুর কাছ থেকে ধার নেওয়া। বেলা ১১টায় বংশালের নর্থ সাউথ রোডের মাহিন ভাল্ব অ্যান্ড ফিটিংসের (ময়লার গলি) সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে একটি রিকশা তাকে অতিক্রম করে সামনে এসে সালাম দিয়ে বলে, ‘ভাই কেমন আছেন? আপনি কি আহম্মদের লোক?’ সেলিম বলেন, ‘আমি আহম্মদকে চিনি না।’ এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আরও তিন ব্যক্তি সেলিমের রিকশা ঘিরে ধরে বলে, ‘চিৎকার-চেঁচামেচি করবি না। তোর কাছে টাকা আছে দিয়ে দে, নইলে জানে মেরে ফেলব।’ পরে সেলিমের রিকশার ডান ও বাঁ পাশে দুজন দাঁড়িয়ে তার প্যান্টের ডান ও বাঁ পকেট থেকে সব টাকা ছিনিয়ে নেয়। সালাম পার্টির সদস্যরা টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার সময় সেলিম চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ও টহল পুলিশের হাতে জাহাঙ্গীর আলী নামে একজন গ্রেফতার হন। বাকিরা পালিয়ে যায়। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার নারকেলবাড়িয়া গ্রামে ২১ আগস্ট অভিযান চালিয়ে হাসান ও মিরাজকে গ্রেফতার করা হয়। আশপাশের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং হাসান ও মিরাজের স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাশেদ হোসেন জানতে পারেন, ৫ আগস্টের ঘটনায় গ্রেফতার আরেফিন ১৭ আগস্টের ঘটনায় গ্রেফতার হাসানের বোনজামাই। তাদের চক্রের আরেক সদস্য নজরুল হাওলাদারও হাসানের বোনজামাই। নজরুলকে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার সোনাচর গ্রাম থেকে ২৫ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যেই গ্রেফতার হন সাইফুল, আরেফিন ও পলাশ।

সর্বশেষ খবর