শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
কৃষি

মাল্টিলেয়ার পদ্ধতিতে সবজি চাষ

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

মাল্টিলেয়ার পদ্ধতিতে সবজি চাষ

কৃষিজমির বহুমুখী ব্যবহারে বদলে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চল। গত কয়েক বছরে উপকূলীয় খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে ধান ও সবজির উৎপাদন বেড়েছে কয়েক গুণ। ঘেরের আইলে বা পতিত জমিতে লাউ, তরমুজ, বরবটিসহ আগাম সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, দুই যুগ আগেও উপকূলীয় এলাকায় একটি বা দুটি ফসল হতো। বছরের অধিকাংশ সময় কৃষিজমি পতিত অবস্থায় থাকত। বর্তমানে সে জমিতে তিন থেকে চারটি ফসল উৎপাদন হচ্ছে। আবার একই জমিতে মাল্টিলেয়ার পদ্ধতিতে একসঙ্গে একাধিক ফসলও চাষ হচ্ছে। এভাবে জমির বহুমুখী ব্যবহারে বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য। জানা যায়, প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় সার্ভে করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। প্রকল্পের আওতায় পাঁচ জেলায় ইউনিয়নভিত্তিক মাটির গুণাগুণ যাচাই, সার প্রয়োগ ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

একই সঙ্গে চাষির জমিতে প্রদর্শনী প্লট তৈরি করে ঘেরের পাড়ে পতিত জমিতে আগাম সবজি চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রকল্প কর্মকর্তা শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টি ও লবণাক্ততার কারণে প্রায় ছয় মাস জমি ফসলহীন থাকে। ওই জমিকে কাজে লাগাতে লবণ, খরা ও দুর্যোগ সহনীয় ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বটিয়াঘাটার লবণাক্ত জমিতে ভুট্টা চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। খুলনার ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা ও গোপালগঞ্জে প্রথমবারের মতো বর্ষাকালীন তরমুজের চাষ হয়েছে। অসময়ের এ তরমুজ উৎপাদনে চাষিরা ভালো দাম পেয়েছেন। এ ছাড়া মাল্টিলেয়ার পদ্ধতিতে একই জমিতে একই সঙ্গে একাধিক ফসল আবাদে প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে; যাতে সারা বছরই মাঠে ফসল থাকে এবং পর্যায়ক্রমে চাষিরা তা বিক্রি করতে পারেন।’ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, খুলনা জেলায় প্রায় ৯২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে আমন ধান, সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন ও ৬ হাজার ৫৫২ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ হয়। তবে চলতি বছরে জমিতে ধান ও আগাম সবজি চাষে বিপ্লব ঘটেছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার আবু উবাইয়া বলেন, ‘বাজারে এখন শীতকালীন সব ধরনের সবজি পাওয়া যায়। কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারে এ বছর প্রায় ১২৩ হেক্টর পতিত জমিতে বর্ষাকালীন তরমুজ হয়েছে। জমিতে একই সঙ্গে শিম, বরবটি, লাউ, কুমড়া, ঢেঁড়স চাষেও নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।’ এদিকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষককে উচ্চমূল্যের সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খুলনার উপপরিচালক হাসান ওয়ারিসুল কবীর বলেন, ‘আগে যেখানে লাউ, কুমড়া বিক্রি করে চাষি উৎপাদন ব্যয় উঠাতেন এখন সেখানে ঘেরের ওপর মাচায় তরমুজ চাষে বহুগুণ বেশি লাভবান হচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ যোগাযোগ ও বাজার অবকাঠামো উন্নয়নে চাষিদের জন্য কৃষিসহায়ক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এতে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির পাশাপাশি বদলাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য।’

সর্বশেষ খবর