শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

এইডসের ওষুধ ও কিট সংকট

বিমানবন্দরে পড়ে আছে ১০ কোটি টাকার ওষুধ ছাড়পত্র দিচ্ছে না ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর কিট সংকটে বন্ধ হচ্ছে বুথ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

মজুদ ওষুধ ফুরিয়ে আসায় রোগীদের সরবরাহ নিয়মিত রাখতে সংকটে পড়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় এইডস/এসটিডি নির্মূল কর্মসূচি। সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের সময় বিদেশ থেকে ওষুধ আমদানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় ছাড়পত্র দিচ্ছে না ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। দুই মাস ধরে ১০ কোটি টাকার ওষুধ পড়ে আছে বিমানবন্দরে। এইডস শনাক্তের কিট সংকটে বন্ধ হতে চলেছে কয়েকটি বুথ।

আমদানিতে দুর্নীতি হয়েছে কি না এ সিদ্ধান্তে না পৌঁছানোয় ছাড়া হচ্ছে না ওষুধ। কাগজপত্র খতিয়ে দেখে ছাড়ের ব্যবস্থা না করে বিমানবন্দরে ফেলে রাখা হয়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধ। চলতি মাসে রোগীদের চিকিৎসায় এ ওষুধ যোগ হওয়ার কথা। এখনো বিমানবন্দর থেকে ছাড় না হওয়ায় কর্মসূচিতে ওষুধ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। চলতি মাস থেকে রোগীদের প্রয়োজনীয় সব ওষুধ পাঠানো সম্ভব হবে না বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিমানবন্দরে পড়ে থাকায় বাড়ছে করের বোঝা, নষ্ট হচ্ছে ওষুধের গুণগত মান। ওষুধের পাশাপাশি কিট সংকটে বন্ধ হচ্ছে এইডস শনাক্তের কয়েকটি বুথ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমবিডিসি) ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ দায়িত্বে থাকাকালে এ ওষুধ আমদানির প্রকিউরমেন্ট হয়েছিল। এ জন্য ওষুধ ছাড় হতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে আমাদের মজুদ আছে, রোগীদের অসুবিধা হবে না।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল এইডস-এসটিডি প্রোগ্রামের (এনএএসপি) তথ্যানুযায়ী দেশে এইডস  রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার। গত বছর এইডস আক্রান্ত ৯১৯ জন শনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ১০৫ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ১৭০ জন মারা গেছেন। ১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয়। ১৯৮৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দেশে এইডস আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৩৭৪ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৩৪২ জন। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকার ওষুধ প্রয়োজন পড়ে জাতীয় এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে। এর মধ্যে ১০ কোটি টাকার ওষুধ বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি করা হয়। বাকি আড়াই কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয় দেশীয় কোম্পানি থেকে। ১৬ এপ্রিল ১০ কোটি ১৯ লাখ টাকার বিদেশি ওষুধ কেনার চুক্তি হয়। ২০ এপ্রিল বরাদ্দ করা হয় অর্থ। ৩০ এপ্রিল আমদানি করার জন্য অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দেওয়া হয়। অর্থ ছাড় করা হয় ৩ মে। ২০ মে খোলা হয় এলসি। এর মধ্যেই শুরু হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরে ক্ষমতার পালাবদল। রিজেন্ট হাসপাতাল, জেকেজি কেলেঙ্কারিতে পদত্যাগ করেন মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে মাঠে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বদলি করা হয় বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে। এ জন্য সাবেক ডিজির সময়ে প্রকিউরমেন্ট হওয়া প্রকল্পের ওষুধ ছাড় দিচ্ছে না ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। কাগজপত্র খতিয়ে না দেখে বিমানবন্দরে ফেলে রাখা হয়েছে এইডস নির্মূল কর্মসূচির ১০ কোটি টাকার ওষুধ। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বারবার চিঠি দিলেও ওষুধ ছাড়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। বিমানবন্দরে ফেলে রাখায় প্রতিদিন বাড়ছে করের বোঝা। সেপ্টেম্বরে এসব ওষুধ কর্মসূচিতে যোগ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা ছাড় না পাওয়ায় নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এইডস কর্মসূচির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘একজন এইডস রোগীর চিকিৎসায় মাসে ৬ হাজার থেকে ২৩ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। এর মধ্যে কিছু ওষুধ দেশীয় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেওয়া হয়। জুনে ওষুধ পাওয়ার কথা থাকলেও এখনো মেলেনি। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও আমরা রোগীদের বাড়িতে কুরিয়ার করে ওষুধ পাঠিয়েছি। আমাদের কাছে যা ছিল তা প্রায় শেষ। রবিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তা হিসেবে কিছু ওষুধ পাওয়া গেছে। এটা দিয়ে কয়েক দিন চলবে। তারপর কীভাবে হাসপাতালে ও রোগীদের বাড়িতে ওষুধ পাঠানো হবে তা আমাদের জানা নেই। কয়েকবার ঔষধ প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। বেশি তৎপরতা দেখালে ভাবতে পারে আমাদের স্বার্থ রয়েছে। ওষুধ ছাড় দিলে যাচাই-বাছাই করে আমাদের হাতে আসতে প্রায় দেড় মাস লাগে।’

কিট সংকটে বন্ধ হচ্ছে বুথ : সারা দেশে ২৮টি বুথে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে চারটি ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। কিট সংকটে আরও চারটি বুথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এইডস কর্মসূচি সূত্রে জানা যায়, এইডস শনাক্তের এ কিট আমদানি তিন-চারটি প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সিন্ডিকেট করে কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে কিট। এতে কর্মসূচির বরাদ্দকৃত অর্থে সংকুলান হচ্ছে না। এ জন্য কিট কিনতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় পাওয়া কিট দিয়ে চলছে এইডস শনাক্ত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর