রবিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
কানাডায় বাংলাদেশির স্বীকারোক্তি

বাবা-মা-বোন ও নানিকে নিজ হাতে একের পর এক হত্যা করেছি

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

বাংলাদেশি-কানাডীয় যুবক মিনহাজ জামান (২৪) আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি একাই দীর্ঘ সময় ধরে একের পর এক জবাই করে হত্যা করেছেন তার নানি ফিরোজা বেগম (৭০), বাবা মনিরুজ্জামান (৫৯), মা মমতাজ জামান (৫০) এবং একমাত্র বোন মেলিসা জামানকে (২১)। টাঙ্গাইলের সন্তান মিনহাজ গত বৃহস্পতিবার কানাডার অন্টারিয়ো কোর্টে এ জবানবন্দি দিয়েছেন। এই হত্যাকান্ডের কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, তিনি যে তার জীবন-যাপন সম্পর্কে অনবরত সবাইকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, তা চাপা দিতেই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। হত্যাকান্ড শেষ করার পর তিনি নিজেই পুলিশকে ধরা দেওয়ার জন্য প্রযোজনীয় পদক্ষেপ নেন।

কোর্টে মিনহাজ জানান, অন্টারিয়োর মারখাম রোগের বাড়িতে গত বছরের ২৭ জুলাই বিকাল থেকে গভীর রাতের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এই চারজনকে তিনি হত্যা করেন। প্রথমেই বিকাল ৩টায় মাকে খুন করেন। এরপর পরিবারের অপর সদস্যদের হত্যার পরিকল্পনা করে অপেক্ষায় থাকেন। বিকাল ৪টার দিকে তিনি তার নানিকে খুন করেন। এরপর ছোটবোন মেলিসা কর্মস্থল থেকে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন। মেলিসা কাজ করতেন ফুড ব্যাসিক্স নামে একটি সংস্থায়। মেলিসা না ফেরা পর্যন্ত মিনহাজ ভিডিও গেমে ব্যস্ত রাখেন নিজেকে। রাত ১১টায় বোন বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তাকে হত্যা করেন। আর বাবা ট্যাক্সি চালিয়ে পরিবারের ভরণ- পোষণ চালাতেন। তিনি গভীর রাতে নিজের শিফট শেষ করে বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তাকেও খুন করেন। ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে পরিবারের সবাইকে হত্যার পর মিনহাজ পুলিশের অপেক্ষায় থাকেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি হত্যাকান্ডের সচিত্র ভিডিও চ্যাটিং করে বাইরের সবাইকে জানাতে থাকেন। তখন একজন মিনেসোটা থেকে কানাডার পুলিশকে তথ্যটি অবহিত করলে সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয় মিনহাজদের বাসা। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, ‘মিনহাজ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে ভর্তি হন। এর পরের বছর (২০১৪-২০১৫) তিনি সব বিষয়েই ফেল করেন। একসময়ের মেধাবি ছাত্র মিনহাজ ভিডিও গেমসহ নানা ইভেন্টে আসক্ত হওয়ায় ক্লাস ফলো করতে সক্ষম হননি। এ অবস্থায় মিনহাজ হতাশায় নিপতিত হন এবং মা-বাবার কাছে নিজের এসব তথ্য প্রকাশের পরিবর্তে প্রতিদিনই বাসা থেকে বের হয়ে নিকটস্থ মলে অথবা ব্যায়ামাগারে সময় কাটিয়েছেন। এভাবেই অতিবাহিত করেন ৪ বছর। মা-বাবা-বোন জেনেছেন গত বছরের ২৮ জুলাই তার গ্র্যাজুয়েশন হবে। এমন একটি শুভক্ষণের প্রতিক্ষায় ছিলেন সবাই। এমন লাগাতার মিথ্যাচার ঢাকতেই মিনহাজ সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে আদালতকে অবহিত করেছেন।’ আদালত এ ঘটনার বিষয়ে শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছে ২৬ অক্টোবর।

সর্বশেষ খবর