রবিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
অপহরণ-গুমের ৬ বছর পরে ফিরল যুবক

নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ডিবি ও সিআইডির ৮ কর্মকর্তাকে তলব

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

অপহরণ ও গুমের ৬ বছর পর আদালতে হাজির হয়েছে এক যুবক। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানায় অপহরণের ৬ বছর ও মামলার ৪ বছর পর কথিত অপহৃত যুবকের আদালতে হাজির হওয়ার ঘটনায় ৮ জনকে তলব করেছে আদালত। গত শুক্রবার বিকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফতাবুজ্জামানের আদালত এই নির্দেশ দেয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে নারায়ণগঞ্জের একটি আদালতে মামলার বিচারকাজ চলাকালে হাজির হয় মামুন নামে ওই যুবক। ২০১৪ সালের ১০ মে মামুন অপহরণ হয়েছে অভিযোগ এনে দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৯ মে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন বাবা আবুল কালাম। ওই মামলায় ৬ জনকে বিবাদী করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামুনকে অপহরণের পর গুমের অভিযোগ করা হয়েছিল। ৬ জন ইতিমধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগও করেছেন। রিমান্ডে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হয় পুলিশের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় শুক্রবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফতাবুজ্জামানের আদালত মামলার এজাহার থেকে চার্জশিট পর্যন্ত পুলিশ ও সিআইডির যে ৮ জন কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন তাদের ৭ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত তদন্ত প্রতিবেদনসহ আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এই মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুলিশ, ডিবি ও সিআইডির যে আট কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন তাদের তলব করেছে আদালত। মামলাটি যারা তদন্ত করেছেন তারা হলেন- ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মিজানুর রহমান, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এসআই মিজানুর রহমান, এসআই সফিকুর রহমান, এসআই আশরাফুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ আফজাল হোসেন তালুকদার, নারায়ণগঞ্জ সিআইডির এসআই জিয়াউদ্দিন উজ্জ্বলসহ দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১০ মে মামুন অপহরণ হয়েছে অভিযোগ এনে দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৯ মে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন বাবা আবুল কালাম। ওই মামলায় ৬ জনকে বিবাদী করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামুনকে অপহরণের পর গুমের অভিযোগ করা হয়েছিল। এ মামলায় বিবাদী করা হয়-তাসলিমা, রকমত, রফিক, সাগর, সাত্তার ও সোহেলকে। মামলার পর পুলিশ অভিযুক্ত ৬ জনকেই গ্রেফতার করে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, রিমান্ডে থাকার সময়ে গ্রেফতারকৃত ৬ জনকে মারধর করা হয় এবং ৬ জনকেই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু তাদের কেউ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।

ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মিজানুর রহমান আদালতে আসামিদের রিমান্ড চাওয়ার সময়ে আর্জিতে উল্লেখ করেন, ‘খালাতো বোন তাসলিমা ২০১৪ সালের ১০ মে মামুনকে ডেকে নিয়ে কৌশলে অপহরণ করে বিষাক্ত শরবত পান করিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিয়ে গুম করেছে।’ পরবর্তীতে মামলাটি পুলিশের অপরাধ বিভাগ সিআইডিকে ন্যস্ত করা হয়। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। এতে মামলার এজাহারভুক্ত ৬ জনকেই অভিযুক্ত করেন। সাক্ষী করা হয়েছিল ২১ জনকে।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১০ মে খালাতো বোন তাসলিমাকে দিয়ে কৌশলে মামুনকে বাড়ি ডেকে আনা হয়। পরবর্তীতে মামুনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাসলিমা। কিন্তু বিয়েতে রাজি না হওয়ায় বিবাদী ৬ জন মিলে মামুনকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। তবে কোথায়, কীভাবে, কী অবস্থায় রাখা হয়েছে তা জানা যায়নি।’ ঘটনার বিবরণে মামলার অন্যতম আসামি চাঁদপুরের মতলব থানা এলাকার রকমত আলীর মেয়ে তাসলিমা বলেন, ‘আমাকে একই এলাকার মো. আবুল কালামের ছেলে মামুন পছন্দ করত। আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি সাড়া দেইনি। পরে আমি আমার ভাইদের সঙ্গে খালারবাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় চলে আসি। কয়েক দিন পর আমি বাড়ি চলে যাই। বাড়ি চলে যাওয়ার পর আমার বিয়ে হয়ে যায়।’

এদিকে মামুন তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু মামুনের বাবা আবুল কালাম আমি (তাসলিমা)-সহ আমার খালু রকমত, ভাই রফিক, খালাতো ভাই সোহেল ও সাগর এবং আমার মামা সাত্তারকে আসামি করে মামলা করেন। আর এই মামলায় আমি ও আমার ভাই এক বছর করে জেল খাটি। বাকিরা সবাই এক মাস করে জেল খাটে।

‘জেলে থাকাবস্থায় আমাদের ওপর অনেক নির্যাতন নিপীড়ন করা হয়। আমাকে গর্ভাবস্থায় জেল খাটতে হয়েছে। দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জবানবন্দি আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জবানবন্দি দেইনি। কারণ আমরা এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না। এরই মধ্যে মামুন আদালতে উপস্থিত হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর