সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাকালেও থেমে নেই শিল্পকলা

মোস্তফা মতিহার

করোনাকালেও থেমে নেই শিল্পকলা

করোনাভাইরাসজনিত বৈশ্বিক মহামারীতে অন্যান্য কর্মকান্ডের মতো সংস্কৃতিকর্মীদের জীবনেও নেমে এসেছিল চরম অনিশ্চয়তা। সে অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে কাজ করেছে শিল্পকলা একাডেমি। সব জাতীয় আন্দোলনে, গণজাগরণে এবং দুর্যোগকালে এদেশের শিল্পীরা যে অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছিলেন সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রমেও। দেশ-বিদেশের শিল্পীদের সুরক্ষা, কর্মহীন শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো, জাতির মনোবল সুদৃঢ় করা, দেশের মানুষকে সচেতন ও দায়িত্বশীল করার অভিপ্রায়ে ‘আর্ট এগেইনস্ট করোনা’ শীর্ষক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনের রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি। এই কর্মসূচির আওতায় ইতিমধ্যেই দেশব্যাপী চারুকলা, সংগীত, যন্ত্রসংগীত, নাটক, চলচ্চিত্র ও অভিনয়, কবিতা, নৃত্য ইত্যাদি মাধ্যমের শিল্পীরা সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করছেন। আর কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অনলাইনে এ পর্যন্ত দেশের সহস্রাধিক শিল্পী অংশ নেন। যেখানে প্রতিদিন ১০-১৫ হাজার দর্শক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। ঢাকার মতো দেশের ৬৪টি জেলার শিল্পকলা একাডেমিও অনলাইনে অনুরূপ অনুষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। ‘আর্ট এগেইনস্ট করোনা’ শীর্ষক কর্মসূচিতে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত আর্টক্যাম্পে দেশের ৩০০ শিল্পী তিনশটি শিল্পকর্ম অঙ্কন করেছেন। এগুলো নিয়ে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ভার্চুয়াল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ‘বাঙালির মহানায়ক’ শিরোনামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের সাংস্কৃতিক অন্ষ্ঠুানেও ছিল বর্ণাঢ্য আয়োজন। এছাড়া শোক দিবস পালনের অংশ হিসেবে ‘মুক্তির মহানায়ক’ শিরোনামে ভার্চুয়াল আর্ট গ্যালারির মাধ্যমে আলোকচিত্র ও চিত্রকর্ম প্রদর্শনী শিল্পানুরাগীদের নজর কেড়েছে। অন্যদিকে একাডেমির আয়োজনে দেশের নৃত্য ও নাট্য সংগঠনগুলো নির্মিত খ-নৃত্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্যরে ব্যাপ্তির নাটক নিয়মিত অনলাইনে প্রচার হচ্ছে। প্রয়াত মনীষীদের জীবনভিত্তিক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রচার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প অবলম্বনে নির্মিত চারটি চলচ্চিত্র- রাজপুত্তুর, ডাকঘর, মাধো ও ‘বিশ্বম্ভর বাবুর দায়’ নিয়ে উৎসব আয়োজন, পুতুলনাট্য উৎসব আয়োজন, নজরুলজয়ন্তীতে অনুষ্ঠান সম্প্রচার, বিশ্বসংগীত দিবস উদযাপনেও কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি করোনা। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের শিল্পীদের আয়োজনটিও ছিল চমকপ্রদ। শিশু শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান, ঋতুভিত্তিক অনুষ্ঠান বর্ষামঙ্গল, প্রবীনদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঈদের বিশেষ আয়োজনসহ আগস্ট মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস-২০২০ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মাসব্যাপী ‘শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক অনুষ্ঠান মোহিত করেছিল ভার্চুয়াল দর্শকদের। করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা ও সতর্কতামূলক প্রচারণার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ১৪ জন বিশিষ্ট শিল্পী ও নাট্যব্যক্তিত্বকে নিয়ে নির্মিত সতর্কীকরণ ভিডিওর প্রচারণা ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। রামেন্দু মজুমদার, লিয়াকত আলী লাকী, মামুনুর রশিদ, মোশাররফ করিম, হাসান আরিফ, আফসানা মিমি, জাকিয়া বারী মম, ডা. এজাজুল ইসলাম, তারিক আনাম খান, অনিমা রায়, কামাল বায়েজিদ, মীর সাব্বির, ফারুক আহমেদ ও শমী কায়সারের প্রচারণায় সংস্কৃতিকর্মীরা উদ্দীপ্ত হয় নতুনভাবে। এ বিষয়ে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার সংস্কৃতিবান্ধব। প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায়ই কাজগুলো করতে পারছি। প্রধানমন্ত্রী যদি সহযোগিতা না করতেন তাহলে করোনাকালে এই কাজগুলো করা সম্ভব হতো না। যত প্রতিকূলতা ও সংকট আসুক এদেশের শিল্পীসমাজ সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।

সর্বশেষ খবর