মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

এলডিসি থেকে বেরিয়ে যেতে প্রস্তুত বাংলাদেশ

ফেব্রুয়ারিতে পর্যালোচনা করবে জাতিসংঘ

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড-১৯ এর কারণে অর্থনীতি ও সামাজিক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা যথাসময়েই জাতিসংঘের কাছে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে দেশের অবস্থান তুলে ধরবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, আগামী বছরের ২২ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের মানদন্ড পর্যালোচনা করবে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। সরকার চাইছে, সেখানে দেশের অবস্থান আরও শক্তভাবে তুলে ধরতে। সূত্রগুলো জানায়, আগামী বছরের মার্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের সমাপ্তিপর্বে দেশের মানুষকে এ ধরনের একটি সংবাদ দিতে চাইছে সরকার, যে কভিড-১৯ দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সামাজিক খাতে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করলেও সেটি বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করতে পারেনি। ফলে আগের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই বাংলাদেশ জাতিসংঘের সামনে উন্নয়ন সূচকগুলো তুলে ধরবে। জানা গেছে, প্রথমবারের মতো দ্বিতীয়বারেও যাতে বাংলাদেশের অবস্থান ভালোভাবে জাতিসংঘের কাছে তুলে ধরা যায়, সে লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সরকার। গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) জুয়েনা আজিজ ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেন। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে : আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের পর্যালোচনা সভায় অংশগ্রহণের আগ পর্যন্ত এলডিসি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে গৃহীত রোডম্যাপ বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রতি মাসে সভা করে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে। একইসঙ্গে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়গুলো কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সে সম্পর্কিত প্রতিবেদন টাস্কফোর্সের সভায় উপস্থাপন করবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই সভায় অংশ নিয়েছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) প্রফেসর শামসুল আলম। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, কভিড-১৯ এর প্রভাব উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। জাতিসংঘের দ্বিতীয় পর্যালোচনা সভায় আমরা দেশের অবস্থান আরও শক্তভাবে তুলে ধরব। এ লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। সূত্রগুলো জানায়, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করে। ওই সময় জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) জানিয়েছিল, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য বিবেচ্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এই ৩টি সূচকেই বাংলাদেশ যোগ্যতা অর্জন করেছে। তবে তা ছয় বছর ধরে রাখতে হবে। তিন বছর পরপর পর্যালোচনা করা হবে। তিন বছর পর সিডিপির সেই ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভাটি হবে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে। এ অবস্থায় কভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে নাকি পিছিয়ে যাবে সেটি নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে আলোচনা চলছিল। এ বছরের এপ্রিলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এক প্রতিবেদনে জানায়, কভিড-১৯ এর প্রভাবে বিশ্ব বাণিজ্য সংকুচিত হওয়ায় এলডিসি দেশগুলোর উত্তরণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর এলডিসি হিসেবে পণ্য রপ্তানিতে যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়া যায় সেটি থাকবে না। আবার বৈদেশিক ঋণে সহনীয় সুদ ও নমনীয় শর্তও সীমিত হয়ে আসবে। করোনা পরবর্তী বিশ্ব বাণিজ্যে এলডিসির সুবিধা হারিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার বিষয়টি প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ ধরনের আলোচনার মধ্যে গত ৩ সেপ্টেম্বর স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর কমপক্ষে আরও দশ বছর যাতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বহাল রাখা হয়, সে ধরনের একটি প্রস্তাব দিয়ে এলডিসি গ্রুপের কাছে চিঠি পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ খবর