বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

মেডিকেলে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত পাঁচ ডাক্তার ও তিন কোচিং

মূলহোতা আবদুস সালাম গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর প্রেস থেকে মেশিনম্যান আবদুস সালামের হাত দিয়েই ফাঁস হতো প্রশ্নপত্র। এরপর তারই খালাতো ভাই জসিম উদ্দিন মুন্নুকে তা সরবরাহ করা হতো। জসিম তার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে দিত। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে অন্তত পাঁচজন চিকিৎসক ও তিনটি কোচিং সেন্টার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত সোমবার রাতে রাজধানীর বনশ্রী থেকে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূলহোতা আবদুস সালামকে গ্রেফতারের পর এমনই তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম বলেন, গ্রেফতার আবদুস সালামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা নেই বললেই চলে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে অর্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যাংকে জমা রাখার চেয়ে জমি কেনাই ছিল তার নেশা। তিনি কী পরিমাণ জমির মালিক তা জানার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে কী পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন তার তদন্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে নামে-বেনামে, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির তথ্য পেয়েছি। অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষ হলে প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে। ২০১৫ সালে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর থেকেই আবদুস সালাম পলাতক ছিলেন। মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের হোতাদের অন্যতম এবং মামলার পলাতক আসামি স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর মেশিনম্যান আবদুস সালামকে গতকাল ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করা হলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আবদুস সালাম ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিল। ২০০৬-২০০৯ সাল পর্যন্ত এক দফা প্রশ্ন ছাপার কাজ থেকে তাকে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। অভিযোগ থাকার পরও কীভাবে সালাম আবার প্রেসের কাজ ফিরে পেলেন সে ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও হাসপাতাল শাখার সাবেক পরিচালক এ বি এম আবদুল হান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। সিআইডি কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের সন্ধান পাওয়া যায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ জুলাই জসিমউদ্দীন ভূঁইয়া, জাকির হোসেন এবং এস এম সানোয়ার হোসেন নামে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও সাতজন গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা সবাই পরস্পর আত্মীয়। তাদের কাছ থেকে জানা যায়, জসিমের খালাতো ভাই আবদুস সালামই প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলহোতা। তার মাধ্যমেই প্রশ্ন বের হতো এবং জসিম তার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিত। জড়িত পাঁচ চিকিৎসক ও তিনটি কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নপত্র চলে যেত। এই চক্র ২০১৩ ও ২০১৫ সালের সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টালের প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছিল। জসিমের ৩৮টি ব্যাংক হিসাবে ২১ কোটি ২৭ লাখ ও তার স্ত্রীর ১৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় পৌনে ৪ কোটি টাকার সন্ধান মিলেছে। এর আগে, জসিমের কাছ থেকে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক, ২ কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র পাওয়া যায়। মেডিকেল ও ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর